মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায়
মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায়

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা, আহত ৪

মানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন ভক্ত-অনুরাগীসহ মোট চারজন আহত হয়েছেন।

‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে থাকা একদল ব্যক্তি এবং আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে এ ঘটনা ঘটে। আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

আহত ভক্তরা হলেন জেলার শিবালয়ের শাকরাইল গ্রামের আবদুল আলীম (২৫), সিঙ্গাইরের তালেবপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম (২৯) ও হরিরামপুরের কামারঘোনা গ্রামের জহিরুল ইসলাম (৩২)। আহত অন্যজন হলেন সদর উপজেলার বরঙ্গাখোলা গ্রামের আবদুল আলীম (২৭)।

পুলিশ, আহত ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে জেলা শহরে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে থাকা একদল ব্যক্তি। একই সময়ে আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করেন তাঁর ভক্তরা।

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল। রোববার সকালে শহরের খালপাড় এলাকায়

সকাল ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তাঁরা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার প্রধান ডাকঘর কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন।

অন্যদিকে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন তাঁর ভক্ত-অনুরাগীরা। কিন্তু অন্য পক্ষের মিছিলের কারণে তাঁরা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে কর্মসূচি পালন না করে দক্ষিণ সেওতা এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দক্ষিণ পাশে জড়ো হন।

অন্য পক্ষের সমাবেশস্থল থেকে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ গজ দূরে শহীদ মিনারের অবস্থান। সেখানে আবুল সরকারের ভক্ত-অনুসারীদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে থাকা ব্যক্তিদের হামলায় আবুল সরকারের তিন ভক্ত-অনুরাগী আহত হন।

হামলায় আহত বাউলশিল্পীদের পক্ষের একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে

পাশাপাশি আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের হামলায় আবদুল আলীম আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে আহত ব্যক্তিদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুজিত চন্দ্র রায় বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের মাথার একাধিক স্থানে সেলাই দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আবদুল আলীম বলেন, লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়। ইট দিয়ে তাঁদের মাথায় আঘাত করা হয়েছে।

বাউলশিল্পীর সহকারী বাউলশিল্পী রাজু সরকার বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, হানাহানি নয়। আমরা আবুল সরকারের মুক্তি চাই।’

হামলায় তৌহিদী জনতার পক্ষের একজন আহত হয়েছেন। রোববার জেলা সদর হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়

মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাউলশিল্পী আবুল সরকারের শাস্তির দাবিতে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। অন্যদিকে আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীরা তাঁর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন। পরে তৌহিদী জনতার একটি অংশ আবুল সরকারের সমর্থকদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তিন-চারজন আহত হন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি এখন শান্ত ও স্বাভাবিক আছে।

৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা এলাকায় খালা পাগলির মেলায় পালাগানের আসরে বাউলশিল্পী আবুল সরকার ধর্ম অবমাননা করে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। তাঁর মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ নভেম্বর রাতে মাদারীপুরে একটি গানের আসর থেকে আবুল সরকারকে আটক করে মানিকগঞ্জ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরের দিন সকালে তাঁকে জেলা ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। ওই দিন দুপুরে মুফতি মো. আবদুল্লাহ বাদী হয়ে আবুল সরকারকে আসামি করে ঘিওর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।