চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছে নুরুল হামিদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তবে তাঁর নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ভোটার তালিকাতেও দেখা গেছে। এই তালিকায় একই বিভাগের আরেক সহকারী অধ্যাপক রন্টু দাশও রয়েছেন। অথচ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিক্ষকদের ভোটার হওয়ার কথা নয়।
শুধু তা–ই নয়; বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ফরহাদ হোসেন হলটি ছাত্রদের জন্য। এই হলের ভোটার তালিকায় পাঁচ ছাত্রীর নাম রয়েছে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। চাকসুর ভোটার তালিকা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ; যদিও এটি খসড়া তালিকা। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তালিকার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি গ্রহণ করা হবে। পরে ১১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জানতে চাইলে চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুল থাকতে পারে ভেবেই খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যে দুই শিক্ষকের নাম এসেছে, তাঁদের এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। নাম নিয়ে আপত্তি থাকলে শিক্ষার্থীকে নিজ বিভাগের আবেদন করতে হবে। এই আবেদনের কপি নির্বাচন কমিশনে দেখালে তা সংশোধন করে দেওয়া হবে।’
কোন বিভাগে কত ভোটার
খসড়া তালিকা অনুযায়ী চাকসুতে মোট ভোটার ২৫ হাজার ৮৬৬ জন। এতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আলাদা করে উল্লেখ নেই। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ তালিকায় ছাত্রীর সংখ্যা ১০ হাজারের একটু বেশি। চূড়ান্ত তালিকায় এটি প্রকাশ করা হবে। খসড়া তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে অর্থনীতি বিভাগে। এতে শিক্ষার্থী ৮৯৪ জন। আর সবচেয়ে কম জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রে। এতে ভোটার রয়েছে ৩৩ জন।
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ৭০৫ জন, ফাইন্যান্স বিভাগে ৮৬১ জন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগে ৬২২ জন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৫৮০ জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৬৯৬ জন, মার্কেটিং বিভাগে ৫৮৭ জন ভোটার রয়েছেন।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত অর্থনীতি বিভাগে ৮৯৪ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৮৯৩ জন, সমাজতত্ত্ব বিভাগে ৭০৪ জন, লোকপ্রশাসন বিভাগে ৮৪৪ জন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ৪৪৪ জন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৩৭৪ জন, নৃবিজ্ঞান বিভাগে ৪৮০ জন, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ ২২৬ জন, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে ১৮৭ জন ভোটার আছেন।
জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ ২২৬ জন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ ২৫৯ জন, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে ৪৬৬ জন, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে ২৮০ জন, আইন বিভাগে ৮০০ জন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে ২৫৩ জন, ফার্মেসি বিভাগে ২৪৬ জন, মনোবিজ্ঞান বিভাগে ২০৪ জন, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে ৩০৬ জন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ৪৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
অন্যদিকে বিজ্ঞান অনুষদে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে ২০৭ জন, রসায়ন বিভাগে ৬৩৫ জন, বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৫০৩ জন, গণিত বিভাগে ৭৫৭ জন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ৫৪৯ জন ও পরিসংখ্যান বিভাগে ৭০৬ জন ভোটার রয়েছেন।
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের বাংলা বিভাগে ৭১৬ জন, ইংরেজি বিভাগে ৭৬০ জন, ইতিহাস বিভাগে ৭৯৩ জন, আরবি বিভাগে ৬৫৪ জন, বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে ৩১২ জন, নাট্যকলা বিভাগে ২১০ জন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৭৬৬ জন, চারুকলা ইনস্টিটিউটে ৪৪৩ জন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ২৪১ জন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ৭৫৯ জন, সংগীত বিভাগে ১৩৭ জন, পালি বিভাগে ৩৪১ জন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ১৫৪ জন, দর্শন বিভাগে ৮০৮ জন ও সংস্কৃত বিভাগে ৩১৪ জন ভোটার রয়েছেন।
প্রকৌশল অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৪৯৮ জন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩৭১ জন ভোটার রয়েছেন।
মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটে ২৭৮ জন, ফিশারিজ বিভাগে ১৭১ জন, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে ১৬৫ জন ভোটার রয়েছেন।
শিক্ষা অনুষদভুক্ত শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগে ২৯৫ জন আর আইন অনুষদভুক্ত আইন বিভাগে ভোটার রয়েছেন ৮০০ জন।
গত ২৮ আগস্ট চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তাতে খসড়া তালিকায় ভোটার ছিলেন ২৫ হাজার ৭৫২ জন। সর্বশেষ তালিকায় নতুন ১১৪ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ১৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যাচাই–বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হবে গণনা।