সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র জাফলং পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বালু–পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা। শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গোয়াইনঘাটের বল্লাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও শ্রমিক দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
শনিবার সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সেখান থেকে ফেরার পথে বল্লাঘাট এলাকায় তাঁদের গাড়িবহর আটকে বালু–পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বন্ধ থাকা জাফলংসহ সিলেটের পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে স্লোগান দেন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুই উপদেষ্টা জাফলং পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা জানান, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর ইজারা দেওয়া হবে না। এরপরই কিছু ব্যক্তি বিক্ষোভ শুরু করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর উপদেষ্টারা গাড়িতে ওঠেন। ফেরার পথে বল্লাঘাট এলাকায় স্থানীয় বালু-পাথর ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ কয়েক শ মানুষ পাথর কোয়ারির ইজারা দেওয়ার দাবিতে তাঁদের গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করেন। পাঁচ থেকে সাত মিনিট দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে রাখেন তাঁরা। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে উপদেষ্টারা সিলেটে চলে আসেন।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, শনিবার বিকেলে দুই উপদেষ্টার কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি এলাকা পরিদর্শন করার কথা ছিল। তবে জাফলংয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার পর তাঁরা সেখানে যাননি।
গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় থাকা পাথর কোয়ারি ও নদ-নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত আছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের অভিযোগে ৫ আগস্টের পর পরিবেশ অধিদপ্তরের করা একাধিক মামলায়ও বিএনপি এবং অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়।
পাথর উত্তোলনের অভিযোগে গত ১৪ অক্টোবর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের দলীয় পদ স্থগিত করেছে বিএনপি। সর্বশেষ ৯ জুন জাফলংয়ে পাথর উত্তোলনে জড়িত থাকায় জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমকে বহিষ্কার করা হয়।
একাধিক ছবি ও ভিডিওতে উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে ছাত্রদল ও যুবদল নেতা–কর্মীদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। বিক্ষোভে নেতৃত্বে ছিলেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খান, জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবদুল জলিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম ও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রমজান মোল্লা।
জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় পরিচয় নিয়ে সেখানে (উপদেষ্টাদের গাড়িবহর আটকানো) যাওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ সেখানে যান এবং উপদেষ্টাদের গাড়িবহর আটকে সরকারি কাজে বাধা তৈরি করে থাকেন, সেটা দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বা আড়ালে কারা ছিলেন, তা এখনো পুলিশ জানতে পারেনি। তবে পুলিশ তাঁদের শনাক্ত করতে কাজ করছে।
দুই উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের সময় কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হামলা ও স্লোগানকে ন্যক্কারজনক ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাপা ওই ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।