সমবায় সমিতিটির কোনো নিবন্ধন নেই। তারা শতাধিক নারীর অন্তত ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে।

শুরুতে দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের ঋণ দেওয়ার আশ্বাস। এরপর আগ্রহীদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে নেওয়া হয় টাকা। শেষে নির্ধারিত দিনে ঋণ নিতে গিয়ে গ্রাহকেরা দেখেন প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় বন্ধ; সবাই লাপাত্তা। গাজীপুরের শ্রীপুরের গোসিংগায় ‘প্রত্যয় শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ১০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন সব আসবাব ফেলে উধাও হন। সমিতির গ্রাহক হয়ে ঋণের অপেক্ষায় থাকা নারীরা গতকাল শুক্রবারও প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে যান। কিন্তু কাউকে পাননি তাঁরা। সমিতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সবার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ। ভুক্তভোগীরা জানান, গোসিংগা ইউনিয়নের অন্তত দেড় শ নারী প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এই নামে আমাদের শ্রীপুরে কোনো সমবায় সমিতির নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি শুনেছি। ওই সমিতি ভুয়া। লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।উৎপল কুমার মন্ডল, সমবায় কর্মকর্তা, শ্রীপুর উপজেলা
গোসিংগা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের এক প্রবাসীর বাড়ি ভাড়া নিয়ে কার্যালয় বানিয়েছিল প্রত্যয় শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িটি তালাবদ্ধ। সামনে সমিতির কয়েকজন গ্রাহককে পাওয়া যায়। তাঁদের হাতে দেওয়া পাস বই থেকে জানা যায়, সমিতির নিবন্ধন নম্বর ০২২৯৮। শ্রীপুর সমবায় কার্যালয় থেকে নিবন্ধন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা উৎপল কুমার মন্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই নামে আমাদের শ্রীপুরে কোনো সমবায় সমিতির নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি শুনেছি। ওই সমিতি ভুয়া। লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’
প্রতারণার বিষয় নিয়ে কথা হয় গোসিংগা ইউনিয়নের পেলাইদ ও কর্ণপুর গ্রামের ১৩ নারীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, সমিতির ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক পরিচয়ে তাসলিমা আক্তার নামের এক নারী গ্রামে গ্রামে ঘুরে সদস্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা ভর্তি ফি বাবদ ৩০০ টাকা ও অন্য কাগজপত্র বাবদ আরও ৩০০ টাকাসহ মোট ৬০০ টাকা নেওয়ার মাধ্যমে নারীদের সমিতির সদস্য করে।
এরপর গত বুধবার তাঁদেরকে পাস বই দেওয়া হয়। বেশির ভাগ সদস্য লক্ষাধিক টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। ঋণের জন্য বুধবারই সঞ্চয় বাবদ সদস্যদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় । সমিতির লোকজন বিভিন্ন গ্রামে সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্র কাঠামো তৈরি করেন।
পেলাইদ গ্রামের খাসপাড়া মসজিদ মোড় এলাকার আলী হোসেনের স্ত্রী মাহফুজা খাতুন বলেন, তাঁকে বৃহস্পতিবার এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য গত বুধবার সমিতির কর্মীদের কাছে তিনি ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। একই দিন তাঁর মতো ওই গ্রামের আরও পাঁচজন ১০ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ঋণ আনতে সমিতিতে গিয়ে কাউকে পাননি তাঁরা।
একই গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন, তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন ফি বাবদ ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এর বিনিময়ে গরু কেনার জন্য দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঋণ না দিয়েই সমিতির লোকজন টাকা নিয়ে পালিয়েছে। চক্রটি কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে।
গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সুমন প্রধান এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে গ্রামের সহজ-সরল নারীদের সঙ্গে। আমি নিজে ওই অফিসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা থানায় অভিযোগ করেছেন। এটি একটি চক্র। এই চক্রকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শনাক্ত করতে পারলে অসহায় নারীদের টাকাগুলো উদ্ধার হবে।’
সমবায় সমিতিটির ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক তাসলিমা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেও ওই এলাকায় একটি চক্র একই রকম প্রতারণা করে গেছে। কর্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গোসিংগা এলাকায় মুজিবুরের বাড়িতে একই পদ্ধতিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ঋণদান অফিস খোলে একটি চক্র। ঋণ পেতে নিজে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান রাসেল। পরে লোকজন উধাও হয়ে যান।
এবারের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব। অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলমান আছে।’