Thank you for trying Sticky AMP!!

পারিবারিক বিরোধের জেরে নারী ও তাঁর দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা, ধারণা স্বজনদের

জেকি আক্তারের কোলে সাত মাসের শিশুসন্তান ওজিহা। পাশে জেকির বড় ছেলে মাহিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পারিবারিক বিরোধের জেরে প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবার দাবি করেছে। হত্যার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিহত জেকি আক্তারের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বাঞ্ছারামপুর থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধের জেরে প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ঘটনার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। মোটামুটি শনাক্ত হয়েছে। এখনই কিছু বলতে চাইছি না। আমাদের পক্ষ থেকে বিস্তারিত সব আপনাদের জানানো হবে।’

ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত নারীর জা তানজিলা বেগম এবং মো. সুমন ও মো. সবুজ নামের দুই প্রতিবেশীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তবে কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

Also Read: বাড়ির দরজা ভেঙে মা ও দুই ছেলের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার, অক্ষত সাত মাসের ওজিহা

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চরছয়ানী দক্ষিণপাড়া গ্রামের সৌদিপ্রবাসী শাহ আলমের বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতর থেকে তাঁর স্ত্রী জেকি আক্তার (৪০) এবং দুই সন্তান মাহিন ইসলাম (১৬) ও মহিন ইসলাম ইসলামের (৬) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় শাহ আলমের ৭ মাস বয়সী মেয়েশিশু ওজিহাকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।

নিহত জেকি আক্তারের বাবা ও মামলার বাদী আবুল হোসেনের দাবি, ‘আমার নাতজামাই জহিরুল ইসলাম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকে নরসিংদীর মাধবদী থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর থানায় পুলিশ হেফাজতে আছে সে।’

আবুল হোসেনের ভাষ্য, ‘বছর দেড়েক আগে আমার বড় মেয়ে শিল্পী আক্তারের মেয়ে আনিকা আক্তারের সঙ্গে নরসিংদী সদর উপজেলার নূরালাপুর ইউনিয়নের আলগীচর গ্রামের জহিরুল ইসলামের বিয়ে হয়। আনিকার শাশুড়ি বদমেজাজি হওয়ায় সে স্বামীর বাড়িতে যেতে চাইছিল না। আমার বড় মেয়ে ও তাঁর স্বামীও তাঁদের মেয়েকে যেতে দিচ্ছিল না। এ জন্য গত সোমবার সকালে জহিরুল তাঁর খালাশাশুড়ি, অর্থাৎ আমার আরেক মেয়ে জেকি আক্তারের বাসায় এসেছিল। স্ত্রী আনিকাকে বোঝানোর জন্য জেকিকে সে অনুরোধ করে। জেকি বিষয়টি নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলার জন্য জহিরুলকে বলে। এরপর জহিরুল চলে যায়। নাতজামাই জহিরুল সোমবার রাতে আবার আমার মেয়ে জেকির বাসায় যায়। শ্বশুর-শাশুড়িকে বিষয়টি না বলার জন্য খালাশাশুড়ি জেকিকে অনুরোধ করে সে। কিন্তু তখন জেকি বিষয়টি মুঠোফোনে আমার বড় মেয়ে শিল্পীকে জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমার মেয়ে ও দুই নাতিকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর জহিরুল বাইরে থেকে ফটকে তালা দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। বাসার জানালার থাই গ্লাস বন্ধ থাকায় তাদের চিৎকার বাইরে থেকে কেউ শোনেনি।’

Also Read: মা ও দুই ভাইকে হারিয়ে শিশু ওজিহা এখন চাচাতো বোনদের কোলে

স্থানীয় লোকজন, নিহত নারীর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ থেকে ১৮ বছর আগে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দারিয়াচর গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে জেকি আক্তারের সঙ্গে চরছয়ানি গ্রামের সুলতান সরকারের সৌদিপ্রবাসী ছেলে শাহ আলমের বিয়ে হয়। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে চরছয়ানি গ্রামের একটি পাকা বাড়িতে থাকতেন জেকি আক্তার। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাড়িটিতে যান গৃহপরিচারিকা জেসমিন আক্তার। এ সময় বাড়ির প্রধান ফটকে তালা থাকায় কলবেল চাপেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে জেকি আক্তারের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানান। পরে চাবি নিয়ে এসে জা খালেদা আক্তার ও গৃহপরিচারিকা বাড়ির ফটক খুলে সব দরজা-জানালা বন্ধ দেখেন। পরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে মেঝেতে জেকি ও তাঁর বড় ছেলে এবং শৌচাগারে ছোট ছেলের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। আর কন্যাসন্তান ওজিহাকে পাশের আরেকটি কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় অক্ষত পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনার পর গতকাল রাতেই শাহ আলম সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন।

গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মা-ভাই হারানো দুধের শিশু ওজিহা চাচাতো বোন পাপিয়া আক্তার ও আঁখিমণির কাছে ছিল। গতকাল সকাল থেকে শিশুটি কাঁদছিল। চাচি খালেদা বেগমের কাছে ওজিহা থাকবে বলে জানিয়েছেন শিশুটির দাদা সুলতান সরকার।

নিহত জেকি আক্তারের মা ঝর্ণা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মেয়ে অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছিল। জা, শ্বশুর-শাশুড়িসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করত। কেন এমন হয়েছে জানি না।’

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় নরসিংদীর মাধবদী থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা ঘটনার খুব কাছাকাছি আছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’ তিনি বলেন, জেকি আক্তারের মাথার পেছনে ও কোমরে, মাহিনের মাথার পেছনে ও মহিনের হাতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বঁটি ও ধারালো বাটালি উদ্ধার করা হয়েছে।