ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন সংগঠন। খাগড়াছড়ি শহরের মহাজনপাড়া এলাকা থেকে আজ দুপুরে তোলা
ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন সংগঠন। খাগড়াছড়ি শহরের মহাজনপাড়া এলাকা থেকে আজ দুপুরে তোলা

কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ, ধর্ষকদের বিচার দাবি

খাগড়াছড়িতে ১৪ বছরের কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থী ও সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় এ ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে।

আজ সকালে সাধারণ শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের ব্যানারে খাগড়াছড়ির উপজেলা সদরের ভাইবোনছড়া মুনিগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের দেওয়ানপাড়া ঘুরে এসে আইডিয়াল স্কুলের সামনে শেষ হয়। কয়েক শ এলাকাবাসী মিছিলে অংশ নেন। মিছিল চলাকালে প্রায় দুই ঘণ্টা খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

এ ছাড়া খাগড়াছড়ি শহরে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষার্থী ওয়াপাইং মারমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উখ্যেনু মারমা, সাধারণ শিক্ষার্থী কবিতা চাকমা, দেবাশীষ চাকমা, তাতুষান চাকমা, উজ্জ্বল চাকমা, নিশি চাকমা প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা আসামিদের বিএনপির দলীয় লোকজন দাবি করে বলেন, ধর্ষক যে দলের হোক না কেন, বিচার হওয়া জরুরি। বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচার হয় না। এ কারণে ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ২৭ জুন ওই কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। তবে পরিবার গতকাল বুধবার রাতে ঘটনাটি জানতে পারে। এরপর গতকাল রাতেই ওই কিশোরীর বাবা থানায় মামলা করেন।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটলেও সামাজিক লজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে ভুক্তভোগী কিশোরী প্রথমে পরিবারকে কিছু জানায়নি। তবে এ ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গত শনিবার বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারে।

মামলা হওয়ার পরপরই গতকাল রাতে অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫) ও এনায়েত হোসেন (৩৫) এবং শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (৩২)। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন একটি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল ইসলাম (২৩)। তাঁরা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আসামি ছয়জন আমাদের নেতা-কর্মী ছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কারণে তাদের সবাইকে মৌখিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তারা আমাদের কর্মী নন।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দলীয় কর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, আসামিরা বিএনপির সঙ্গে এখনো জড়িত। ৫ আগস্টের পরও বিএনপির বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশে তাঁদের দেখা গেছে।

আসামিরা বিএনপির নেতা-কর্মী নন দাবি করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আফছার বলেন, ধর্ষক যে দলের হোক না কেন, বিচার হওয়া জরুরি। তিনিও ধর্ষকদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। ঘটনা শোনার পরপরই শিক্ষার্থীকে দেখতে তিনি হাসপাতালে যান। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং চিকিৎসার জন্য দলের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা পরিবারের কাছে দিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া সব সময় চিকিৎসার খোঁজ নিচ্ছেন।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নেওয়ার কথা বলা হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো নিয়ে যাওয়া হয়নি।

পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘মামলা হওয়ার পরপরই আমরা চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী কিশোরী এখন হাসপাতালে আছে। আজ তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।’