সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর মাজারের ঐতিহ্যবাহী ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। এবার মাজারে ৭০৬তম উৎসব হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৮ ও ১৯ মে মাজারে ৭০৬তম বাৎসরিক ওরস অনুষ্ঠিত হবে। বহু বছর ধরে চলে আসা নিয়ম অনুযায়ী লাকড়ি তোড়া উৎসবে সংগৃহীত কাঠ দিয়ে ওই ওরসে রান্না করা হবে।
লাকড়ি তোড়া উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ শুক্রবার দুপুরে মাজার ছিল অনেকটা উৎসবমুখর। সরেজমিনে দেখা যায়, নানা সাজে সজ্জিত হয়ে ভক্তরা উপস্থিত হয়েছেন শাহজালাল (রহ.)–এর মাজারে। বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুরাও সামিল হচ্ছেন দলে দলে। এর মধ্যে অনেকে নতুন পোশাক পরেছেন। আবার অনেক ভক্তকে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে এ আয়োজনে অংশ নিতে দেখা যায়। জুমার নামাজের পর মাজারে আসা মুসল্লি এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ভক্তরা পদযাত্রাসহকারে মাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে লাক্কাতুরা চা-বাগানের টিলায় যান। এ সময় তাঁরা ‘লালে লাল শাহজালাল’ স্লোগান দিয়ে জ্বালানি সংগ্রহ করে আবার দরগাহে ফেরেন।
মাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বার্ষিক ওরসের তিন সপ্তাহ আগে হিজরি সন অনুযায়ী এ উৎসব হয়। ৭০০ বছরের অধিক সময় ধরে এটি হয়ে আসছে। লাক্কাতুরা টিলা এলাকা থেকে সংগ্রহ করা জ্বালানি কাঠগুলো হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর পুকুরে ধুয়ে রাখা হয়েছে নির্দিষ্ট স্থানে। তবে প্রতিবছর বাদ্যযন্ত্র নিয়ে একদল ভক্তকে লাকড়ি তোড়া উৎসবে অংশ নিতে দেখা গেলেও এবার বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কাউকে আসতে দেখা যায়নি।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ‘শাহজালাল (রহ.) তাওহিদি কাফেলা’ নামের একটি সংগঠন লাকড়ি তোড়া ও মাজারের আসন্ন বাৎসরিক ওরসে ‘ইসলাম ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধে’ পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে। এমন ঘোষণার পরই উৎসবকে ঘিরে মাজারপন্থীদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা ছিল। কিন্তু শুক্রবার নির্বিঘ্নে মাজারের কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শাহজালাল (রহ.)–এর মাজারের খাদেম সামুন মাহমুদ খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও লাকড়ি তোড়া উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সামনে ওরসও সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন হবে। ‘তাওহিদি কাফেলা’র বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরের মতোই আমরা আমাদের আয়োজন করব। মাজারে পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।’
মাজারে ভক্তদের মধ্যে কথিত আছে, এক ব্যক্তির পেশা কাঠুরে হওয়ায় তাঁর মেয়েদের বিয়ে হচ্ছিল না বলে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর কাছে অনুযোগ করেন। এরপর শ্রেণিবৈষম্য ঘোচাতে হজরত শাহজালাল (রহ.) সঙ্গীদের নিয়ে এক বেলা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করেন। সেই থেকে এটি ‘লাকড়ি তোড়া’ হিসেবেই ঐতিহ্যবাহী এক উৎসব পালিত হয়ে আসছে।