শেরপু‌রে নাচগানের আসর ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা

শেরপুর জেলার মানচিত্র
শেরপুর জেলার মানচিত্র

শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নে নাচগানের আসর বন্ধকে কেন্দ্র করে একদল ব্যক্তির সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে ‘ইত্তেফাকুল উলামা’ নামের একটি সংগঠনের নেতা মামলাটি করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ২৫ জনকে। অজ্ঞাতনামা আসামি অর্ধশতাধিক। এসব তথ্য নিশ্চিত করে শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম প্রথম আলো‌কে বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

পুলিশ স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের কয়েকজন যুবক গত শুক্রবার রাতে জারিগানের আয়োজন করেন। এর আগে এলাকার মাওলানা আজিজুর রহমান ওই আসর না বসানোর অনুরোধ জানান। কিন্তু আয়োজকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলেমদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যেকোনো মূল্যে অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দেন। রাত ৯টার দিকে শতাধিক ব্যক্তি কামারেরচর বাজারে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে আসরে গেলে আয়োজকেরা পালিয়ে যান। গানের মঞ্চ খুলে দেওয়ার পর ফেরার পথে তাঁদের ওপর অজ্ঞাতনামা একদল দুবৃত্ত ইটপাটকেল ছোড়ে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে মাওলানা আজিজুর রহমান, হাফেজ শাহীনুর রহমান (শাহীন) ও মোকলেছুর রহমান আহত হন।

আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর মুসল্লিরা রাতেই চরভাবনা কান্দাপাড়া মোড়ে বিক্ষোভ করেন। পরদিন শনিবার সকালে চরাঞ্চলের কওমি মাদ্রাসায় পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নন্দীরবাজার এলাকার ঝগড়ারচর-বকশীগঞ্জ সড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। তাঁরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন মুসল্লিরা।

রা‌তেই ইত্তেফাকুল উলামার প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফকুরুজ্জামান বা‌দী হ‌য়ে শেরপুর থানায় মামলা ক‌রেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন বলেন, ‘আমরা চাই অভিযুক্ত‌ ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শা‌স্তি দেওয়া হোক। আর যেন কেউ এ ধর‌নের ঘটনা ঘটানোর সাহস না দেখা‌তে পা‌রে।’

গানের আয়োজকদের একজন মো. মিস্টার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জারিগানে কোনো অশ্লীলতা হয়নি। কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নি‌য়ে এসে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। হামলার ঘটনা সম্প‌র্কে ব‌লেন, ‘আমরা কাউকে মা‌রি‌নি এবং কারও ওপর হামলাও ক‌রি‌নি।’

চরমোচারিয়া ইউনিয়ন প‌রিষ‌দের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘এসব আসরে নাচগানের নামে মেয়েদের এনে অশ্লীলতা করা হয়। এই অশ্লীলতা ব‌ন্ধের প্রতিবাদ করায় মুস‌ল্লি‌দের ওপর হামলা করা ঠিক হয়‌নি। আমরা এই ঘটনার স‌ঙ্গে জ‌ড়িত‌দের শা‌স্তির দা‌বি জানাই। ত‌বে এ নি‌য়ে গ্রামবা‌সী আত‌ঙ্কে আছেন।’