সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
আজ সোমবার তাঁর পক্ষে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল ঢাকায় দলীয় প্রধানের কার্যালয় থেকে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ সময় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা এবং সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র খায়রুজ্জামান অংশ নেবেন নাকি রাজশাহীর কোনো একটি আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন, তা নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা চলছিল। খায়রুজ্জামান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হওয়ার পরে অনেকেই ধারণা করছিলেন, খায়রুজ্জামান জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হলে পুরো রাজশাহী জেলার উন্নয়নে তিনি ভূমিকা রাখতে পারবেন। আবার আরেকটি পক্ষের মতামত ছিল, রাজশাহী সিটিকে মেয়র খায়রুজ্জামান যে জায়গায় নিয়ে গেছেন, সেখানে তাঁর কোনো বিকল্প নেই। তাই সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে তাঁকেই আবার দায়িত্ব নিতে হবে।
তবে এসব আলোচনার অবসান ঘটিয়ে আজ খায়রুজ্জামানের পক্ষে মোহাম্মদ আলী কামাল দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ সময় রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক, রাজশাহী মহানগর আাওয়ামী লীগের সহসভাপতি নওশের আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন ও আহসানুল হক, সাবেক সহসভাপতি শাদত হোসেন ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১০-১২ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে মনোয়ন ফরম তুলেছেন। তাঁরা দলীয় প্রধানের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত পেয়েছেন। দলীয় নেত্রী খায়রুজ্জামান লিটনকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে বলেছেন। এ জন্যই তাঁরা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। আর কেউ দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন কি না, জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘আর এক হাজার জন তুলুক, সেটা তাঁর দেখার বিষয় না।’
সৌদি আরব থেকে উমরাহ হজ শেষে মেয়র খায়রুজ্জামান ৮ এপ্রিল ঢাকায় ফিরেছেন। তবে তিনি এখনো রাজশাহীতে পৌঁছাননি। মনোনয়ন ফরম তোলার পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলের নেতারা তাঁর পক্ষে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। দলীয় সভানেত্রী চাইলে তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচন করবেন। ১২ এপ্রিল তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
এদিকে এর আগে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বর্তমান মেয়র দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের খবর পাওয়ার পর আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন যেহেতু মনোনয়নপত্র তুলেছেন, দলীয় প্রধান তাঁকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে বলেছেন, সুতরাং তিনি আর মনোনয়নপত্র তুলবেন না।
খায়রুজ্জামান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হওয়ার পরে অনেকেই ধারণা করছিলেন, খায়রুজ্জামান জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলতে পারেন, এ রকম একটি আলোচনাও শহরে ছিল। আজ সোমবার দুপুরে তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আগামীকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে বলতে পারবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি রাজশাহী মহানগর যুবদলের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে হেরে যান। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই পুনরায় মেয়র নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। দীর্ঘদিন তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি পুনরায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।