নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম শহীদ তাহমিদ ভূঁইয়ার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির। শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়ায়
নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম শহীদ তাহমিদ ভূঁইয়ার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির। শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়ায়

নরসিংদীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ তাহমিদ ও ইমনকে শ্রদ্ধা

নরসিংদীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রথম শহীদ তাহমিদ ভূঁইয়া (১৫) ও ইমন হোসেনের (২২) কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। গত বছরের এই দিনে পুলিশের গুলিতে শহরের জেলখানার মোড়ে শহীদ হন আন্দোলনরত তাহমিদ ও ইমন।

শুক্রবার সকাল থেকে দিনভর সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে তাহমিদ ভূঁইয়ার কবরে ও পলাশের গজারিয়া ইউনিয়নের দড়িচর গ্রামে ইমন হোসেনের কবরে শত শত মানুষ শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া দুপুরে তাহমিদ ভূঁইয়ার বিদ্যালয় নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল বাছেদ ভূঁইয়া ও বি জি রশিদ নওশের, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর এলাহী, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা।

অনুষ্ঠানে খায়রুল কবির বলেন, ‘দেশে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। গোপালগঞ্জ ও মিটফোর্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। তাহমিদের মতো শহীদদের রক্তে অর্জিত পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। এসব থেকে মুক্তি পেতে গণতন্ত্রের বিজয় অর্জন করা জরুরি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হলেই শহীদ তাহমিদের আত্মা শান্তি পাবে। বিএনপি সরকারে গেলে শহীদদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হবে।’

তাহমিদ ভূঁইয়া শহরের নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে। অন্যদিকে ইমন হোসেন পলাশের গজারিয়া ইউনিয়নের দড়িচর এলাকার কাইয়ুম মিয়ার ছেলে ও শহরের একটি বেসরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন।

গত বছরের ১৮ জুলাই জেলখানা মোড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাহমিদ ও ইমন। দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে হাজারো শিক্ষার্থী স্লোগান দিচ্ছিলেন। সেদিন রাবার বুলেটে বিদ্ধ হয়ে অন্তত আড়াই শতাধিক আন্দোলনকারী দুই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁদের মধ্যে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে তাহমিদ ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে ইমন হোসেনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ইমনের বাবা কাইয়ুম মিয়া বলেন, ছেলে ঘর থেকে বের হওয়ার ৩০ মিনিট পরই তাঁরা মৃত্যুর খবর পান। সেদিন বেলা পৌনে তিনটায় ভাত খেতে বসেছিলেন ইমন। অল্প একটু খাওয়ার পর মুঠোফোনে কল আসে। এরপর এক গ্লাস পানি খেয়ে বেরিয়ে যান। পরে হাসপাতাল থেকে তাঁর গুলিবিদ্ধ লাশ বাড়িতে আনেন।

তাহমিদের বাবা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মৃত ঘোষণার পর হাসপাতাল থেকে তার লাশ স্ট্রেচারে করে আবার আন্দোলনস্থলে নিয়ে আসা হয়। লাশ নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা। পুলিশ সদস্যরা আবার গুলি করেন। উপর্যুপরি গুলি থেকে বাঁচতে আন্দোলনকারী ছাত্ররা লাশ রেখে মসজিদের ভেতরে ঢুকে যান। এ সময় তাহমিদের লাশে আবার গুলি লাগে। মাত্র ৫০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে তিনি এ দৃশ্য দেখেছেন।