Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন মাহ্‌ফুজ আনাম। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসিতে

‘সমাজে যেখানে বৈষম্য, সেখানেই প্রশ্ন তুলেছেন আবুল মনসুর আহমদ’

চিন্তার স্বাধীনতা প্রয়োগের একটা মাধ্যম সাংবাদিকতা। আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন বুদ্ধিবৃত্তিক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। সমাজে যেখানে বৈষম্য দেখেছেন, সেখানেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করেছেন তিনি। সাংবাদিকতা শুধু সংবাদ সংগ্রহে সীমাবদ্ধ নয়; এর সুষ্ঠু ব্যাখ্যা করাও সাংবাদিকতার কাজ। এই জায়গায় একজন সম্পাদক হিসেবে তিনি ব্যক্তিজীবনে স্বতন্ত্র সত্তা গড়ে তুলেছেন।

 বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক মিলনায়তন কেন্দ্রে (টিএসসিসি) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ।

সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা এবং ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের সভাপতিত্বে অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুলের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন। সভায় আলোচক হিসেবে লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক তানভীর আহমদ ও আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক ইমরান মাহফুজ বক্তব্য দেন।

 মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, আবুল মনসুর আহমদ বাঙালি মুসলিমদের কথা চিন্তা করতেন। তিনি মনে করতেন, বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। অনেকে তাঁকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির চোখে দেখেন, কিন্তু এটা মোটেও ঠিক নয়। তিনি মূলত পিছিয়ে পড়া বাঙালি মুসলিমদের এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমী ও যুক্তিবাদী। তিনি আদর্শিক জীবন যাপন করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে খুব নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুতে তিনি রাজনীতিতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। পরে তিনি লেখালেখিতে মনোযোগ দেন।

‘শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আগত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসিতে

মাহ্‌ফুজ আনাম আরও বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার একটা দৈনন্দিন চিন্তার মাধ্যম। আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আগে হলো চিন্তার স্বাধীনতা। মতপ্রকাশ হতে হবে সুচিন্তিত ও তথ্যভিত্তিক। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মতপ্রকাশ করতে হবে। একজনের চিন্তা অন্যকে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। মতের পার্থক্য যুক্তি দিয়ে নিরসন করতে হবে।

 কাজল রশীদ বলেন, সাংবাদিকের মৌলিক গুণ হচ্ছে প্রশ্ন করতে পারা। আবুল মনসুর আহমদের কৈশোর জীবনেই এ গুণ দেখা যায়। সমাজে যেখানে তিনি বৈষম্য দেখেছেন, সেখানেই প্রশ্ন করেছেন। তিনি সমতায় বিশ্বাস করতেন। তিনি সংবেদনশীল মনের অধিকারী ছিলেন। যা তাঁর কিশোর জীবনেই ফুটে উঠেছিল। ১৯২৩ সালে কলকাতায় ‘ছোলতান’ পত্রিকায় সহসম্পাদক হিসেবে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯২৬ সালেই জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন। ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকার মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় ও ভাষা আন্দোলনে একটা শক্ত অবস্থান নেন তিনি। তাঁর সাহসিকতা, চিন্তা, গুণাবলি ও ব্যক্তিত্ব বর্তমান সাংবাদিকতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে আবুল মনসুর আহমদকে মনে রাখতেই হবে।

অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা বলেন, ‘আবুল মনসুর আহমদের ব্যঙ্গাত্মক রচনা আমাকে কৌতূহলী করেছে। আবুল মনসুর আহমদকে নিয়ে তাঁর কৌতূহল ছিল, এখনো আছে। আবুল মনসুর আহমদ তাঁর সময়কালে ও প্রেক্ষাপটে আমাদের ভেতর কীভাবে অনুসৃত হলো, সেটাই দেখার বিষয়। আজকের বাস্তবতায় তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক।’

 অধ্যাপক তানভীর আহমদ বলেন, আবুল মনসুর আহমদ বহুমাত্রিক সম্ভাবনার মানুষ ছিলেন। সাংবাদিকতা পেশাকে পরিপূর্ণ পেশা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতার কাজ শুধু সংবাদ সংগ্রহে সীমাবদ্ধ নয়; এর সুষ্ঠু ব্যাখ্যা করাও সাংবাদিকতার কাজ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ যাঁরা, তাঁদের অধিকাংশের সাংবাদিকতার শুরু তাঁর হাত ধরে। তিনি শুধু সংবাদ সংগ্রহ করেননি, পাশাপাশি তিনি ভালো মানের কলাম ও সম্পাদকীয় লিখেছেন।

সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘একটা জাতি নির্বাক থাকবে, যদি না সাংবাদিকেরা, সাহিত্যিকেরা ও কবিরা তাঁদের কলমে মানুষের কথা তুলে না ধরেন। আবুল মনসুর আহমদ যখন সাংবাদিকতা করছেন, তখন এ দেশ ব্রিটিশদের কাছে পরাধীন ছিল। সেখানে আবার সাম্প্রদায়িক বিভাজনও ছিল। তিনি সব সময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন।’