
কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। কনকনে শীত। সকাল ৯টার পরও আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের মাঠে উপস্থিত ৭৫টি ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর পুরোনো বন্ধুর দেখা পেয়ে সবার মুখে উচ্ছ্বাস। সবাই যেন ফিরে যান শৈশব-কৈশোরে, মেতে ওঠেন গল্প আর আলাপচারিতায়।
এই চিত্র আজ বৃহস্পতিবার সকালের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বোর্ডিং মাঠের। বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে দুই দিনের অনুষ্ঠানে ১৯৫১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যের ওপর প্রদর্শনী, লাঠিখেলার মাধ্যমে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী।
‘আলোকিত ১৫০ সুন্দর পৃথিবীর জন্য আমরা’ স্লোগান নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন অ্যালামনাই অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা এক্স স্টুডেন্ট সোসাইটি (আবেশ) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
সকালে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা, আবেশ ও ১৫০ বছর পূর্তির তিনটি পৃথক পৃথক পতাকা উত্তোলন করেন আবেশের প্রধান পৃষ্ঠপোষক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাজ্জাদুল হক, আবেশের সভাপতি বিমান বাহিনীর সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন সগীর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন সরকার। পরে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সাজ্জাদুল হক। এ ছাড়া অতিথি হিসেবে সরাইল ব্যাটালিয়নের (২৫ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ প্রমুখ।
বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য নিয়ে শারীরিক কসরত প্রদর্শিত হয়। পরে এসএসসি ২০০১ ব্যাচের পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐহিত্যবাহী লাঠিখেলা প্রদর্শন করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে ১৯৫১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্রমানুসারে অংশ নেন। শহরের পুরাতন জেলা রোড, মুমারশীল মোড়, হাসপাতাল রোড ও হালদারপাড়া প্রদক্ষিণ শেষে শোভাযাত্রা অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
সকালের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবেশের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম, সহপ্রচার ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন, ২০০১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ পলাশ ও ২০১৫ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ফাহিম।
স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ৯১ বছর বয়সী সায়েদুর রহমান অনুষ্ঠানে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৫১ সালে এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছি। কত কত স্মৃতি বিদ্যালয় ঘিরে। সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার এমন সুযোগ আর আসবে না। তাই রাঙামাটি থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছি।’
১৯৮৮ ব্যাচের আল মামুন বলেন, ‘পুরোনো স্মৃতি তাজা হয়েছে। ৩৫ বছর পর কয়েকজন বন্ধুর দেখা মিলেছে। সত্যিই বিষয়টি অন্য এক অনুভূতি। যা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়।’
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা, পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, আবেশের বিভিন্ন কার্যক্রমের ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান, র্যাফেল ড্র, জিপিএ প্রাপ্ত ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা, বর্তমান ছাত্রদের পরিবেশনাসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে।