খুলনার বাস্তুহারা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে বাসিন্দাদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার রাতে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এলাকায় মাইকিং করে সকালের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আজ সকাল আটটার দিক থেকে ওই এলাকায় এক্সকাভেটর, বুলডোজার ঢুকতে থাকে। এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সেখানে পুলিশ সদস্যরা যান। এ সময় এলাকার মসজিদের মাইক থেকে বাসিন্দাদের রাস্তায় আসার আহ্বান জানানো হয়। লোকজন জড়ো হয়ে পুলিশের সামনে ব্যারিকেড তৈরি করেন। পুলিশ একপর্যায়ে লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় অন্তত তিনজনের মাথায় আঘাত লাগে। স্থানীয় লোকজন এক্সকাভেটর চালককে অবরুদ্ধ করেন। পুলিশ তখন কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া শুরু করে। এলাকাবাসী পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে এবং টায়ার জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তখন পুলিশ পিছু হটে। এ সময় এক্সকাভেটর ভাঙচুর করে জনতা।
এ ঘটনায় অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন, ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক হাবিবুর রহমান ও আরটিভির ক্যামেরাপারসন গাজী মো. দুলাল আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে তাঁরা উচ্ছেদ করতে দেবেন না। ওই কলোনির একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদা এই জায়গায় মারা গেছে। আমরা এখানে সবাই অসহায়। কেন আমাদের জন্য জায়গা থাকবে না? কোনো ব্যবস্থা না করে কেন উচ্ছেদ চলবে? আমরা তাহলে দাঁড়াব কোথায়?’
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাস্তুহারা নামে পরিচিত ওই এলাকা ‘বয়রা আবাসিক এলাকা’। সেখানে প্রায় ৩০ একর জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে সি ব্লকে তাদের ৫৫টির মতো প্লট আছে। যেগুলো ১৯৮৭ সালে স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪২টি প্লট বেদখল হয়ে থাকায় ৩৮ বছর ধরে তারা প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দিতে পারেনি। বিভিন্ন সময় পাঁচ দফায় উচ্ছেদ করতে গেলেও রাজনৈতিক কারণে দখলদারদের সরানো যায়নি। বিভিন্ন সরকারের আমলে মন্ত্রী, মেয়র, প্রভাবশালী নেতারা উচ্ছেদপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করেছেন। আগাম ঘোষণা দিয়ে আজ রোববার ওই ৪২টি প্লটের জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে যায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বয়রা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৪২টি প্লট দখলদারের দখলে। আগে অনেকবার চেষ্টা করেও দখলদার উচ্ছেদ করে প্লট বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি। আজ সকালে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে বাধার সম্মুখীন হই। আমাদের দুই–তিনজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আপাতত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।’
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী প্রথম আলোকে জানান, তিনিসহ পুলিশের ১৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, ‘সকালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিবসহ অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন। আমরা সতর্ক করলেও তাঁরা (বাসিন্দারা) সরেননি। আমরা একটু এগোতে গেলে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয়। অভিযান স্থগিত করে ফিরে আসছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।’