খামারে পশুর যত্ন নিচ্ছেন স্নাতকের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম। এসএসসির পরই ধারের টাকায় খামার শুরু। এখন তিনি সফল খামরি। খামারে আছে ৪৫টি পশু। সম্প্রতি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ফারুকীপাড়া গ্রামে
খামারে পশুর যত্ন নিচ্ছেন স্নাতকের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম। এসএসসির পরই ধারের টাকায় খামার শুরু। এখন তিনি সফল খামরি। খামারে আছে ৪৫টি পশু। সম্প্রতি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ফারুকীপাড়া গ্রামে

ধারের টাকায় কেনা ছাগল দিয়ে শুরু, এখন ৪৫ পশুর মালিক স্নাতকের শিক্ষার্থী

এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে চাচার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পাঁচটি ছাগল কিনেছিলেন নাঈমুল ইসলাম। এরপর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ফারুকীপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতেই ছাগল পালন শুরু করেন তিনি। প্রথমে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েন, তবে দমে যাননি। টানা ছয় বছর ছাগল পালন ও বিক্রি করতে থাকেন। ধীরে ধীরে লাভের মুখ দেখেন নাঈমুল। বর্তমানে তাঁর ‘ফারুকীয়া অ্যাগ্রো ফার্মে’ ২৮টি ষাঁড় কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন।

নুরুল ইসলামের চার সন্তানের মধ্যে নাঈমুল ইসলাম মেজ। পটিয়া এ এস রাহাত আলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকে পড়াশোনা করছেন। কচুয়াই ইউনিয়নের ফারুকীপাড়ায় নাঈমুলের খামারে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের সঙ্গে লাগোয়া খামারে গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন তিনি। ২০১২ সালে প্রবাসী চাচা আবু তাহেরের কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ধার নেন নাঈমুল। সে টাকায় পাঁচটি পাঁঠা ছাগল কিনে লালনপালন শুরু করেন। কিছুদিন পর হঠাৎ দুটি পাঁঠা অসুস্থ হয়ে মারা যায়। পরে বাকি ৩টি ছাগল ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এতে খরচসহ প্রায় ৬০ হাজার টাকা লোকসানে পড়েন তিনি। পরের বছর চাচার কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে আবারও ২টি বড় পাঁঠা ছাগল কেনেন। চার মাস পর ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন সেগুলো। এভাবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর চার থেকে পাঁচটি ছাগল লালনপালন করেছেন। ২০১৯ সালে ছাগল বিক্রির জমানো ৮০ হাজার টাকায় ২টি দেশি গরু কেনেন। ২০২০ সালে পটিয়া সমাজ সেবা থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ঘরের পাশে টিনশেডের খামার নির্মাণ করেন। এরপর শুরু করেন গাভি ও ষাঁড় পালন। বর্তমানে ১৪টি গাভি, ৩টি বাছুরসহ তাঁর খামারে পশুর সংখ্যা ৪৫টি।

নাঈমুল বলেন, প্রতিটি গাভি থেকে ২০–২৫ কেজি করে দুধ সংগ্রহ করেন প্রতিদিন। দুধ থেকে টক দইও তৈরি করেন বিক্রির জন্য। দুধ ও দই পাশের একটি দোকানে বিক্রি হয়। খামারে এসেও পাইকারি হারে ক্রেতারা দুধ-দই নিয়ে যান। এতে প্রতিদিন আয় হয় প্রায় ১৬ হাজার টাকা। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের সময়ে পশুখাদ্য ও ওষুধের দাম বেড়ে যায়। তখন পশুখাদ্যের জন্য নিজেদের চার কানি জমিতে ভুট্টা এবং সাড়ে চার কানি জমি বর্গা নিয়ে নেপিয়ার ঘাসের চাষ শুরু করেন। ২ বছর আগে ১২ হাজার টাকা বেতনে একজন কর্মচারী রাখেন। সব মিলিয়ে খরচ কমানোর পাশাপাশি খামারের উৎপাদন বাড়াতে সব চেষ্টাই করেন তিনি। খামারে গরুর গোবরও যেন নষ্ট না হয়, তার জন্য জৈব সার তৈরির প্রজেক্ট করারও পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর।

নাঈমুল ইসলামের খামারের নামফলক। খামারে পশু বিক্রির পাশাপাশি দুধও বিক্রি করেন তিনি। বিক্রির তৈরি করছেন টক দইও

এবারের কোরবানির ঈদের জন্য খামারে ২৮টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন নাঈমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২৮টি ষাঁড় বিক্রি করে সেই টাকায় আরও পশু কিনবেন তিনি। খামারের বড় পশুগুলো ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় এবং মাঝারিগুলো ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রির ইচ্ছা তাঁর।

পটিয়া প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভ্যাকসিন কর্মকর্তা সুপ্রিয় বড়ুয়ার নিয়মিত পরামর্শ নেন নাঈমুল। ২০২০ সালে তিনি প্রথম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে গিয়ে দুই দিনব্যাপী প্রাণীর রোগবালাইয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ পর্যন্ত পশু লালনপালন ও চিকিৎসা–সেবার ওপর ২০টির মতো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে দক্ষ খামারি হয়ে ওঠার সব শর্তই পূরণ করেছেন।

কচুয়াই ফারুকীপাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য মোরশেদ ফারুকী বলেন, নাঈমুল খুবই কর্মঠ। স্কুলজীবন থেকে ছাগল পালনের মধ্যে দিয়ে তিনি বর্তমানে একটি খামার গড়ে নিজেই উদ্যোক্তা হয়েছেন, যা খুবই প্রশংসনীয়। তাঁর দেখাদেখি অন্যরাও অনুপ্রেরণা পাবেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘নাঈমুল ইসলাম ফারুকী আমাদের জন্য একজন অনুকরণীয় খামারি। যিনি ছাত্রজীবন থেকেই পশুপালনের প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে অল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করেন। পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আজ একজন সফল খামারিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি এলাকায় প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে আমরা তাঁর খামারকে সব সময় প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’