কুমিল্লা নগরের টমছম ব্রিজ এলাকায় রাস্তার ওপর অবৈধ বাজার উচ্ছেদের দাবিতে এবং রাস্তার দুই পাশে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন। গতকাল টমছম ব্রিজ এলাকায়
কুমিল্লা নগরের টমছম ব্রিজ এলাকায় রাস্তার ওপর অবৈধ বাজার উচ্ছেদের দাবিতে এবং রাস্তার দুই পাশে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন। গতকাল টমছম ব্রিজ এলাকায়

কুমিল্লা নগরে সড়ক ঘেঁষে স্থাপনা নির্মাণ 

  • ৩০টির বেশি দোকান নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ চলছে শতাধিক দোকানের। 

  • এর প্রতিবাদে গতকাল সচেতন নাগরিক সমাজ ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে।

কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়ক। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন সড়কটি ঘেঁষে কয়েক দিন ধরেই রাতারাতি নির্মিত হচ্ছে আধা পাকা স্থাপনা। এসব টিনশেড স্থাপনা ব্যবহৃত হবে দোকানঘর হিসেবে। কোথাও মানুষের বাড়ির সামনে, কোথাও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে আবার কোথাও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনেই নির্মিত হচ্ছে এসব দোকান।

এভাবে সড়ক ঘেঁষে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িকের প্রতিবাদে কুমিল্লা নগরে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে নগরের টমছমব্রিজ এলাকায় জেলা ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয়ের সামনে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ কুমিল্লা মহানগরের’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের সদস্যরাও কর্মসূচিতে যোগ দেন।

টমছমব্রিজ এলাকায় কোথাও মানুষের বাড়ির সামনে, কোথাও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে আবার কোথাও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনেই নির্মিত হচ্ছে দোকান।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গৃহিণী পারভীন নাহার বলেন, ‘আমরার বাসার সামনে দোকান তুলছে। বাসা মনে হয় অন্ধকার হইয়া গেছে। এমন হইলে ভাড়াটিয়াও থাকত না। আমরা যাইতাম কই?’ মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া নামের আরেকজন বলেন, পুরো সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। দোকানের সামনে দোকান তোলা হয়েছে। তাহলে পেছনের ব্যবসায়ীরা কী করবেন এখন?

মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে টমছমব্রিজ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কুমিল্লা বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় টমছমব্রিজ সড়কটির দুই পাশের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। সড়কের পাশের জায়গাগুলো বিমানবাহিনীর, যা সেনাবাহিনী রক্ষণাবেক্ষণ করছে। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ইজারা আনার নামে টমছমব্রিজ থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়ক, ঢুলিপাড়া-বিমানবন্দর সড়কের ঢুলিপাড়া, রাজাপাড়া এবং কুমিল্লা ইপিজেডের দ্বিতীয় গেটের ইয়াসিন মার্কেট এলাকায় রাতারাতি দোকান নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এভাবে দোকান নির্মাণের ফলে পুরো এলাকা বস্তি এলাকায় পরিণত হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩০টির বেশি দোকান নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আরও শতাধিক দোকান নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক মো. আবু রায়হান বলেন, ‘জনদুর্ভোগ হয়, এমন কোনো কাজকে আমরা মেনে নিতে পারি না। এই সড়ক কুমিল্লা নগরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সড়ক দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাখরাবাদ গ্যাসসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী ও মানুষজন চলাচল করেন। সড়কটির যতটুকু প্রস্থ থাকা দরকার, সেটিও নেই। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘেঁষে এভাবে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করা হলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়বে। এ ছাড়া পুরো এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হবে। তাই আমরা দ্রুত এসব স্থাপনা অপসারণ চাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, টমছমব্রিজ এলাকায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কুমিল্লা জেলা শাখার কার্যালয়ের সামনেও দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এতে দূর থেকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কার্যালয়টি দেখা যাচ্ছে না। টমছমব্রিজ এলাকায় জেলা ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয়ের প্রধান ফটকটি বাদ দিয়ে দুই পাশেই অন্তত ১০টি দোকানঘর তোলা হয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে সরকারি এই দপ্তরের সৌন্দর্য। সবচেয়ে বেশি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে ঢুলিপাড়া, রাজাপাড়া এলাকায়।

ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয়ের সামনে আধা পাকা দোকানঘর নির্মাণকারীদের একজন আবু সাঈদ। তিনি বড় একটিসহ মোট তিনটি দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। মানববন্ধন চলাকালে তাঁকে দোকানের নির্মাণকাজের তদারকি করতে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে লিজ নিয়ে এখানে দোকান তুলছি। সব দোকান যেভাবে উঠছে, আমারটাও সেভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব দোকান ভাড়া দেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বলেন, এরই মধ্যে নির্মাণাধীন এসব দোকান ভাড়াও হয়ে গেছে। আকার অনুযায়ী প্রতিটি দোকানই মোটা অঙ্কের অগ্রিম নিয়ে মাসিক ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সওজ বিভাগের কুমিল্লার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আদনান ইবনে হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কটি আমাদের। তবে সড়কের পাশের জায়গা আমাদের নয়। আমাদের ১৮ ফুট প্রস্থের সড়ক রয়েছে, বাড়তি কোনো জায়গা নেই। শুনেছি, সেনাবাহিনীর কাছ থেকে লিজ নিয়ে এভাবে স্থাপনা তোলা হচ্ছে।’