
নূর ইসলাম সিকদার ওরফে কে এম নূর ইসলাম সিকদার (৫৮), নিজেকে পরিচয় দেন ‘বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল’ নামের একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতি হিসেবে। দলটির নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। আবেদনপত্রে দলটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী রহমানিয়া সুপার মার্কেট। তিনতলা ভবনটি বোয়ালমারী বাজার এলাকার জুতাপট্টি মহল্লায়।
নূর ইসলাম বোয়ালমারী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের গুণবাহা মহল্লার বাসিন্দা ও আবদুল জব্বার সিকদারের ছেলে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী; তবে নিজেকে রাজনীতিবিদ পরিচয় দেন। তিনি এক ছেলের বাবা। তাঁর প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন। ছেড়ে চলে গেছেন আরেক স্ত্রী। তাঁর ইচ্ছা, দলের প্রার্থী হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেই আবার বিয়ে করবেন।
বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে দাবি করে নূর ইসলাম বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর দলের নিবন্ধন দেয়নি। এ জন্য ১৭ এপ্রিল দলটির নিবন্ধনের জন্য আবার আবেদন করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রহমানিয়া সুপার মার্কেট গিয়ে জানা যায়, ওই ভবনের তৃতীয় তলায় বসতেন নূর ইসলাম। তবে এক মাস আগে থেকে আর বসছেন না। ভবনটির দোতলার সিঁড়ি ভেঙে তৃতীয় তলায় ওঠার পথে দেখা যায়, কলাপসিবল গেটটি আটকানো; তালা ঝুলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নূর ইসলাম সিকদার তাঁর দলীয় কার্যালয়টি সরিয়ে উপজেলা সদরের তালতলা এলাকায় কাঠের মার্কেটে নিয়েছেন। সেখানে গিয়ে নূর ইসলামের ছবি ও দলীয় পরিচিতিসহ দুটি ডিজিটাল পোস্টার দেখা যায়। পোস্টার দুটি গাছের সঙ্গে লটকানো এবং এতে লেখা আছে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়।
পরে নূর ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এবং তিনি তালতলা এলাকায় আসেন। তিনি তালতলা–সংলগ্ন কাঠপট্টি এলাকার একটি দোকানে নিয়ে যান এই প্রতিবেদককে। ছোট্ট কক্ষটিকে নিজের দাবি করে এটিকে বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে পরিচয় দেন নূর ইসলাম। ওই কক্ষে একটি চৌকি, দুটি টেবিল ও আটটি প্লাস্টিকের চেয়ার এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রাখা। আশপাশে রাখা আছে কাঠের টুকরা ও কাঠ কাটার যন্ত্রপাতি। নূর ইসলাম জানান, রহমানিয়া সুপার মার্কেটে দলটির কার্যালয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। এ কারণে এই অস্থায়ী কার্যালয়। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা পর তিনি আগের জায়গায় ফিরে যাবেন।
নূর ইসলাম দাবি করেন, দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি ২০০ সদস্যবিশিষ্ট। তাঁদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালম রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ঢাকায় তাঁদের কোনো দলীয় কার্যালয় নেই। তবে অচিরেই রাজধানীর বিজয় সরণিতে একটি দলীয় কার্যালয় বানাতে চান।
আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে নূর ইসলাম বলেন, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য (ওয়ারেন্ট অফিসার)। মাসে ৯ হাজার টাকা ভাতা পান। বাবার জমিতে কলাবাগান আছে; পাশাপাশি কাঠপট্টিতে তাঁর এক শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া নানা ধরনের ব্যবসাও করেন। আলাপের এই পর্যায়ে এই প্রতিবেদকের কানের কাছে মুখ নিয়ে নূর ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় দলীয় মনোনয়ন দিয়েও তো টাকা পাব। সব রাজনৈতিক দলই তো এভাবে অর্থ সংগ্রহ করে।’
২০২৪ সালে ফরিদপুর–১ আসনে একতারা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন নূর ইসলাম। তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাঁর বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে জোট করব। আমার দল অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি আসন পাবে।’
নূর ইসলামকে নিয়ে তাঁর বসতবাড়ি গুণবাহা মহল্লায় যান এই প্রতিবেদক। এলাকার পরিচিতজনদের কেউ কেউ তাঁকে ‘এমপি সাহেব’ বলে সম্বোধন করেন। তখন নূর ইসলাম বলে উঠলেন, ‘আমি যে এই এলাকার এমপি, তা সবাই জানে। দেখেন, আমার কত সমর্থক।’