
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মব সৃষ্টি করে শিক্ষক অবমাননা ও তাঁদের হেনস্থার অভিযোগ তুলে শিক্ষকদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের তিনটি সংগঠন। একই সঙ্গে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হামলাকারী শিক্ষকদের বিচার ও জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা–পরবর্তী সময়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে তারা।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে উপাচার্যের সম্মেলনকক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শিক্ষকেরা উপাচার্যের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
শিক্ষকদের তিনটি সংগঠন হলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) ও জিয়া পরিষদ।
আলোচনা শেষে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলীম বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্টের পর থেকে দেখছি, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ও ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করছে। তারা কার্যালয়ে তালা দিচ্ছে, অফিসে কুয়েরি করছে, এটা কোনো ছাত্রের দায়িত্ব হতে পারে না। এই কাজগুলো করা হচ্ছে রাকসুর নাম করে, যেখানে রাকসু সভাপতি উপাচার্য নিজে। রাকসুর সিদ্ধান্ত ছাড়াই তারা রাকসুর পরিচয় ব্যবহার করছে।’
আবদুল আলীম আরও বলেন, ‘ডিনরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একাডেমিক লিডার। তাদের বাঁশে ঝোলানো, কলার ধরে টেনে আনা ইত্যাদি বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সমাধান চেয়েছি। আমরা বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলার জন্য নিয়মকানুন আছে। বিশ্ববিদ্যালয় সেই নিয়ম অনুযায়ী চলবে।’ উপাচার্যের কার্যক্রমে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, উপাচার্য তাঁদের দাবিকে সমর্থন করেছেন। উনি সব সময়ই সেটি করেন। তবে উনি কোনো কাজ করেন না।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে আবদুল আলীম বলেন, ‘ইতিমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে দেশের প্রতিষ্ঠানে শুধু রুটিন কার্যক্রম চলে। এ সময়ে কোনো নিয়োগবিষয়ক কাজ হয় না। আমরা উপাচার্যকে নির্বাচন পর্যন্ত সব প্রকার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছি। উনিই ওনার দায়িত্বে নির্বাচনের পরে আবার নিয়োগ দেবেন।’
বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) রাবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অশান্ত পরিস্থিতিতে শিক্ষক–কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরতে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। জুলাই-আগস্টে সহিংসতা ও ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত শিক্ষকদের ভিডিও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকেরা নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে যদি ক্যাম্পাসে না আসেন, তাহলে ভর্তি পরীক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা স্পষ্ট করেছি, দ্রুত ন্যায্য বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে প্রশাসন দায়ী থাকবে এবং আমরা আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।’
বৈঠকের বিষয়ে উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন ও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসন এখনো আলাদাভাবে বসতে পারেনি।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসুর বর্তমান জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার পোষ্যকোটাবিরোধী আন্দোলনে দিনব্যাপী প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে প্রথমে শিক্ষকমহলে ‘বিতর্কিত’ হয়ে ওঠেন। পরে গত সেপ্টেম্বরে পোষ্য কোটা বহালের সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনসহ একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হয় দুই বছর আগে নির্বাচিত হওয়া ১২ ডিনের। তাঁদের উপাচার্য রুটিন দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। গত বৃহস্পতিবার সালাহউদ্দিন আম্মার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগের সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেন এবং ডিনদের চেয়ারে দেখলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ‘বাকিটা বুঝিয়ে দেব’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন। পরে গতকাল তিনি সেই ডিনদের পদত্যাগপত্র লিখে এনে একে একে সবাইকে কল দেন। এ ছাড়া তাঁদের পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্যসহ প্রশাসনের সব কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিন রুটিন দায়িত্ব পালনে অপরাগতা জানান।