বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা ট্রলারে ডাকাতি, এখনো ৫ জেলের খোঁজ মেলেনি

নিখোঁজ চার জেলেকে উদ্ধারের পর কোস্টগার্ডের সদস্যরা বরগুনার পাথরঘাটায় এনে ট্রলার থেকে হাসপাতালে নিচ্ছেন। আজ সোমবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরে গত শুক্রবার রাতে মাছ ধরতে যাওয়া একটি ট্রলারে জলদস্যুদের হামলায় জীবন বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া ৯ জেলের মধ্যে ৪ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। বাকি পাঁচ জেলের এখনো সন্ধান মেলেনি।

তবে উদ্ধার হওয়া চার জেলের মধ্যে একজন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার বিকেলে মারা গেছেন।

এর আগে আজ সকাল নয়টার দিকে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের অপর একটি ট্রলার থেকে ওই চার জেলেকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করেন কোস্টগার্ড সদস্যরা। বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলার নিদ্রা-সকিনা স্টেশনের কোস্টগার্ড সদস্যরা ওই চার জেলেকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর তাঁদের বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করেন। সেখানে আবদুল হাই (৫০) নামের ওই জেলে মারা যান। তাঁর শরীরে আঘাতের ক্ষত ছিল। আবদুল হাই তালতলীর চামুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এদিকে এ ঘটনায় নিখোঁজ অপর পাঁচ জেলেকে আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।

কোস্টগার্ড জানায়, শুক্রবার রাতে সাগরে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া ৯ জেলেকে উদ্ধারের জন্য গত শনিবার থেকে কোস্টগার্ড অভিযানে নামে। আজ ভোরে তারা খবর পায়, কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের গভীরে এই জেলেরা ভাসতে থাকলে অপর একটি মাছ ধরা ট্রলার তাঁদের উদ্ধার করে। খবর পেয়ে কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে ওই চার জেলেকে উদ্ধার করে পাথরঘাটায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করে।
উদ্ধার হওয়া অপর তিন জেলে হলেন ইয়াসিন জমাদ্দার (৩২), শফিকুল ইসলাম (৫০) ও জামাল খান (৫০)। তাঁদের বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার চরপাড়া ও বরগুনা সদর উপজেলার নলী এলাকায়।

পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেলে আবদুল হাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন এই হাসপাতালের চিকিৎসক রাশিদা তানজুম।

এর আগে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট এম মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ ৯ জেলের মধ্যে ৪ জনকে কোস্টগার্ড সদস্যরা আজ সকালে উদ্ধার করেছেন। পরে তাঁদের পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ বিকেলে কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ পাঁচ জেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁরা হলেন কাইউম জমাদ্দার (৩৫), আবুল কালাম (৫৮), খায়রুল ইসলাম (৪০), আবদুল আলীম (৫৫) ও ফরিদ মিয়া (৩৮)। তাঁদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের চরগাছিয়া গ্রামে।

জেলেদের স্বজন ও ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা জানান, বরগুনা সদরের নলী বন্দরের চরগাছিয়া এলাকার মনির হোসেনের মালিকানাধীন এফবি ভাই ভাই নামের ট্রলারটি শুক্রবার দুপুরে পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য বন্দর থেকে বরফ, জ্বালানি ও বাজারসদাই নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

ট্রলারটি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে ২০০ কিলোমিটার সাগরের গভীরে পৌঁছালে রাত দেড়টার দিকে অন্য একটি ট্রলার নিয়ে জলদস্যুরা ওই ট্রলারে হামলা চালায়। এ সময় দস্যু দলের সদস্যরা ট্রলারের সব জেলেকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে দস্যুরা জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করলে আতঙ্কে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ডাকাতেরা ট্রলারটিতে লুটপাটের পর গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেলে ট্রলারটি সাগরে ভাসতে থাকে। পরে রোববার সকালে অন্য জেলেরা অপর একটি ট্রলারের সাহায্যে ট্রলারটিতে অবস্থানকারী আহত ৯ জেলেকে তীরে ফিরিয়ে আনেন। ডাকাতেরা ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।

জানতে চাইলে পাথরঘাটা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার মজুমদার আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাতির ঘটনায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থানায় একটি মামলা হয়েছে। তবে ওই ডাকাতদের হামলায় আহত জেলে পাথরঘাটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আবদুল হাইয়ের লাশ সুরতহাল করে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।