
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে বাসে ডাকাতি ও দুই নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁদের আজ সোমবার টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানোর পর একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়েছেন। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান আজ দুপুরে তাঁর কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২০ মে রাতে ঢাকা থেকে রংপুরগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গোয়েন্দা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়। রোববার টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সাব্বির হোসেন (৩৪), সিহাব সরকার (২৭) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩৭)। তাঁদের সবার বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রহিমপুর গ্রামে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে বাসযাত্রীদের লুণ্ঠিত ১৯টি মুঠোফোন, একজন নারী যাত্রীর কর্মস্থলের পরিচয়পত্র ও ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তাঁরা স্বীকার করেছেন।
গ্রেপ্তার তিনজনকে দুপুরে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে সাব্বির হোসেন আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়েছেন। অপর দুই আসামি সিহাব সরকার ও জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত দুজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে রংপুরগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরদিন ২১ মে বুধবার বিকেলে ওই বাসের যাত্রী মিনু মিয়া বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। মিনু মিয়া রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহপুর কাশিয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, যাত্রী ও বাসের স্টাফদের কাছ থেকে ডাকাতরা মুঠোফোন, ১১ আনা স্বর্ণ, এক ভরি রুপাসহ মোট ২ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকার মালামাল লুণ্ঠন করে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বাসটি মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে। পথে সাভারের নরসিংহপুর, বাইপাইল, আশুলিয়া থেকে কিছু যাত্রী তোলে। বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা অতিক্রম করে। যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর যাত্রীবেশী ৮ থেকে ১০ জন ডাকাত ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্রের মুখে চালকের কাছ থেকে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে তারা বাসের যাত্রী, চালকসহ সবার চোখ, মুখ বেঁধে ফেলে।
যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর এলাকায় গিয়ে বাসটি ঘুরিয়ে আবার ঢাকার দিকে চলতে থাকে। চলাচলের সময় প্রত্যেক যাত্রীকে তল্লাশি করে মুঠোফোন, নগদ টাকা, সোনার গয়না ও অন্যান্য মালামাল লুটে নেয়। তারা বাসটি নিয়ে সাভারের চন্দ্রা-আশুলিয়া পর্যন্ত যায়। পরে রাতভর কয়েকবার বাসটি নিয়ে ওই এলাকা থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত চক্কর দেয়। এ সময় দুজন নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি করে ডাকাতরা। পরদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে টাঙ্গাইল শহর বাইপাস সড়কের শিবপুর এলাকায় বাসটি রেখে ডাকাত দল চলে যায়। পরে বাসের যাত্রীদের নিয়ে সকালে টাঙ্গাইল সদর থানায় যান চালক।