ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক জালাল শিকদার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার শেখ নুরু (বাঁয়ে) ও মোজাম্মেল মোল্লা। বুধবার দুপুরে ঢাকা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে
ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক জালাল শিকদার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার শেখ নুরু (বাঁয়ে) ও মোজাম্মেল মোল্লা।
বুধবার দুপুরে ঢাকা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে

ছিনতাইয়ে বের হয়েছিলেন দুজন, পরে একজনকে হত্যা করে রিকশা ছিনতাই অন্যজনের

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক জালাল শিকদার (৪৪) হত্যার রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, নিহত জালালের হত্যাকারী শেখ নুরু (৪৬)। তাঁরা দুজনই অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের সদস্য ছিলেন। ঘটনার রাতে তাঁরা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন, কিন্তু ছিনতাই করার জন্য কাউকে না পেয়ে জালালকে হত্যা করে তাঁর অটোরিকশা বিক্রি করে দেন নুরু।

বুধবার দুপুরে ঢাকা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা। তিনি বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যার পূর্বপাড়া কামারপাড়া এলাকার একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায়, তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপার পশ্চিমনেতা গ্রামের জালাল শিকদার। পেশায় অটোরিকশাচালক। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী হনুফা বেগম অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর পিবিআই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে ছায়া তদন্ত শুরু করে।

পিবিআই জানায়, তদন্তের সূত্র ধরে ১১ অক্টোবর রাজধানীর শাহ আলী থানার গুদারাঘাট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি শেখ নুরুকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চুরি ও ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা কেনাবেচায় জড়িত মোজাম্মেল হোসেন নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মোজাম্মেলের দেওয়া তথ্যানুযায়ী রাজধানীর কদমতলী থানার হাবিবনগর খানকা শরিফ এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে নিহত জালালের অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার নুরুকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, সেদিন রাতে নুরু জালালকে মুঠোফোনে কল করে কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় দেখা করতে বলেন। এরপর জালাল এলে দুজন একসঙ্গে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হন। তবে সেদিন তাঁরা কোনো যানবাহন ছিনতাই করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত জালালকেই ‘টার্গেট’ বানান নুরু। একপর্যায়ে নুরু চুনকুটিয়া এলাকায় একটি দোকানে কৌশলে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান জালালকে। এরপর জালালকে অচেতন অবস্থায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা কামারপাড়া এলাকার ডোবার পাশে নিয়ে যান। সেখানে জালালের গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে মৃতদেহ ডোবার পানিতে ফেলে দেন নুরু। পরদিন ভোরে জালালের অটোরিকশাটি রায়েরবাগ এলাকার মোজাম্মেল মোল্লার কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন নুরু।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আরও জানান, জালাল ও নুরু সংঘবদ্ধ অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের সদস্য ছিলেন। তাঁরা ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা চুরি ও ছিনতাই করতেন।

কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, রাজধানীতে এ ধরনের আরও একাধিক ছিনতাই চক্র সক্রিয় রয়েছে। এসব চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।