গাজীপুর সিটির ওয়ার্ড পরিক্রমা: ওয়ার্ড নম্বর ২

ময়লা-আবর্জনায় যত দুর্ভোগ

ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থান না করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াকৈর–নবীনগর সড়কের পাশে চক্রবর্তী এলাকা। সেখানে প্রতিনিয়তই ফেলা হচ্ছে ওই ওয়ার্ডসহ আশপাশের কয়েকটি ওয়ার্ডের আবর্জনা। এতে ভুগতে হচ্ছে পথচারী ও আশপাশের বাসিন্দাদের।
 ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বয়স প্রায় ১০ বছর হয়ে গেলেও এই নগরীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ২ নম্বর ওয়ার্ডের চক্রবর্তী এলাকায়। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে এর প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও এ সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।

এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন থেকে এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থান না করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। চক্রবর্তী এলাকার বাসিন্দা আবুল মনসুর বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনার কারণে এখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কাউন্সিলরকে বারবার অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।’

২ নম্বর ওয়ার্ডটি গাজীপুর সিটির একেবারে পশ্চিম দিকের ৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত। এলাকার ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। ভোটার সংখ্যা কম হলেও এলাকাটিতে শিল্পকারখানার শ্রমিক, তাঁদের পরিবারসহ বিপুল জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই ওয়ার্ডে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিল সোলাইমান মিয়া। তিনি স্ত্রী হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় সেই সময় এলাকার তেমন কোনো উন্নয়নকাজই হয়নি।

দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন মোন্তাজ আলী মণ্ডল। তিনি এলাকার রাস্তাঘাটের কিছু উন্নয়নকাজ করলেও এলাকায় ময়লা-আবর্জানার কোনো নির্ধারিত স্থান তৈরি করতে পারেননি; বরং আশপাশের ওয়ার্ডের আবর্জনা তাঁর ওয়ার্ডের চক্রবর্তী এলাকার কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচলে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি এলাকার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ওই ওয়ার্ডে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। এসব শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য শোধন না করেই ফেলা হচ্ছে খাল ও কৃষিজমিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, লোহাকৈর থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক, লোহাকৈর-হাতিমারা হয়ে লতিফপুর পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কসহ আশপাশের ছোটখাটো আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। পিচ উঠে গেছে, কোথাও কোথাও ইটও নেই। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। এ ছাড়া ভবানীপুর বটতলা থেকে কাউন্সিলরের বাড়ি হয়ে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সামনে দিয়ে চক্রবর্তী এলাকা পর্যন্ত একটি শাখা সড়ক আছে। সেটির অবস্থাও খারাপ। রাস্তাঘাটের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। চক্রবর্তী এলাকায় ছোট জরাজীর্ণ একটি সেতু আছে। ওই সেতুর পাশেই ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। ভ্যানে করে আবর্জনা ফেলতে দেখা যায় নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। তাই এখানে ফেলতে হয়।

ভবানীপুর এলাকায় ধানখেতে কাজ করছিলেন গিয়াস উদ্দিন। তিনি জানান, সেতুর নিচে খাল ছিল। খালের পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে খেতে সেচ দেওয়া হতো। আর বর্ষা মৌসুমে অনেক মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু কারখানার বিষাক্ত পানি খালে ফেলায় এখন আর সেচ দেওয়া যায় না। চাষাবাদও বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

এ ছাড়া ওয়ার্ডটি ঘুরে কোথাও কোনো খেলার মাঠ পাওয়া যায়নি। ভবানীপুর বটতলা এলাকায় একটি জমিতে ক্রিকেট খেলছিল পাড়ার ছেলেরা। জানতে চাইলে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন বলে, তাদের এলাকায় খেলার মাঠ নেই।

ওয়ার্ডের লঙ্করচালা, লোহাকৈর, গজারচাপ, বড় ভবানীপুর, ভিকনপুর, চক্রবর্তীর টেক, সারাব, ছোট গোবিন্দপুর, তেঁতুইবাড়ি, লতিফপুর, মামুননগর, বটতলা, লাবিব গেট, হাতিমারাসহ বেশ কয়েকটি রাস্তার উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাটের সমস্যা দূর হলেও এখনো অনেক নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, ‘গাজীপুর একটি সুন্দর শহর হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা ছিল; কিন্তু আমাদের সে আশা এখনো পূরণ হয়নি।’

ময়লা-আবর্জনার সমস্যাসহ ওয়ার্ডের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোন্তাজ আলী মণ্ডলের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শুধু আমার ওয়ার্ড নয়, ময়লা-আবর্জনার সমস্যা ৫৭টি ওয়ার্ডেই আছে। শুনেছিলাম, ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জন্য মেয়র ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ময়লা-আবর্জনার সঠিক ব্যবস্থা না করতে পারলেও ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়নকাজ হয়েছে।’