
ইসলামপুর-মোশারফগঞ্জ সড়কের পাশে ধানখেতের আলে পড়ে ছিল নবজাতকটি। তার শরীরে জড়ানো ছিল কম্বল। গতকাল সোমবার সকালে হাঁটতে গিয়ে শিশুটিকে দেখতে পান শিক্ষার্থী শাহ জামাল। পরে তিনি শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যান।
ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় শিশুটিকে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে শিশুটিকে আবারও শাহ জামালের বাড়িতে ফেরত দেওয়া হয়েছে। শিশুটির অভিভাবক নির্ধারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইসলামপুর উপজেলার মোশারফগঞ্জ এলাকায় শাহ জামালের বাড়ি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। সড়কের পাশে ধানখেতের আলে একটি নতুন কম্বল দেখতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি, কম্বল দিয়ে প্যাঁচানো একটি শিশু। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো মৃত। ঠান্ডার মধ্যেও শিশুটি একদম চুপচাপ ছিল। পরে ভালোভাবে দেখি, শিশুটি নড়াচড়া করছে। এরপর বাড়ি নিয়ে যাই। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানাই। তারা শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে আবার আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন।’
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শাহ জামাল জানান, ‘শিশুটি একদম সুস্থ। এখন আমাদের বাড়িতেই আছে। সে একদম চুপচাপ থাকে।’
শিশুটি দেখাশোনা করছেন শাহ জামালের মা রিক্তা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটি অনেক সুন্দর। তেমন কান্নাকাটি করে না। আল্লাহ এত মানুষের মধ্যে শিশুটিকে আমার বুকে দিয়েছেন। আমরা শিশুটিকে রাখতে চাই। শুনেছি, আরও অনেকেই নিতে চাচ্ছেন। শিশুটি আমার কাছে ভালো আছে, তাই আমি নিজের কাছে রাখার দাবি করছি।’
শিশুটির অভিভাবক নির্ধারণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুসাইন স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগ্রহী দম্পতিদের আগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জীবনবৃত্তান্ত সংযুক্ত করতে হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও নাজমুল হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে বা কারা সেখানে রেখে গেছেন, তা জানা যায়নি। শিশুটিকে দত্তক (অভিভাবকত্ব) দিতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেকেই আবেদনের মাধ্যমে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের মৌখিক সাক্ষাৎ গ্রহণের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে। শেষে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দত্তক দেওয়া হবে, যাতে শিশুটি সুরক্ষিত থাকে।’