পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের একটি জেটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আজ বুধবার সকালে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে
পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের একটি জেটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আজ বুধবার সকালে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে

পদ্মার প্রবল স্রোতে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে ভাঙন, জেটি বিলীন

পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে লঞ্চঘাটের জেটি (যেখান দিয়ে যাত্রী লঞ্চে ওঠানামা করেন) নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী এবং লঞ্চের শ্রমিক ও মালিকেরা। দ্রুত সময়ে ভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ না দিলে পুরো লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে লঞ্চঘাটের পশ্চিমে ২ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনে লঞ্চগুলোকে রাখা হয়েছে। সেখানে কোনোরকমে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠানামা করানো হচ্ছে।

লঞ্চের মাস্টার ও সুকানিদের অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন দেখা দিলেও কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো প্রস্তুতি নেয় না। এবারও যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

আজ বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে প্রচণ্ড স্রোত বইছে। পশ্চিম পাশের জেটির অধিকাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অপর জেটিটিও নড়বড়ে অবস্থায় আছে। এর সম্মুখভাগ পানিতে তলিয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে সেটিও নদীতে ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। লঞ্চঘাট ভেঙে যাওয়ায় এর পশ্চিমে ২ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনে লঞ্চগুলোকে রাখা হয়েছে। সেখানেই লঞ্চে যাত্রীরা ওঠানামা করছেন।

অপর জেটিটিও নড়বড়ে অবস্থায় আছে। এর সম্মুখভাগ পানিতে তলিয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে সেটিও নদীতে ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আজ বুধবার সকালে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে

পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে তীব্র স্রোতে লঞ্চঘাটের জেটির নিচের মাটি সরে যায়। এর পরপরই একটি জেটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে নদীতে। অপর জেটিও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে। সেটিতেও পানি উঠে গেছে। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে লঞ্চঘাটের একাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে বাধ্য হয়ে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুর্ভোগে পড়েছেন পারাপার হতে আসা যাত্রীরা। পরে গতকাল বিকেলে লঞ্চগুলোকে পাটুরিয়া ২ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনে রাখা হয়। সেখানে কোনোরকমে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠানামা করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ যাত্রী ফেরিতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পারাপার হচ্ছেন। এতে লঞ্চের যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় তাঁদের আয় কমে গেছে। যাত্রীরাও ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে ২৪টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হয়। এর মধ্যে একটি লঞ্চের সুকানি কাজী শফিক বলেন, ‘যে জায়গায় ঘাটটি ছিল সেখান দিয়েই যাত্রীরা যাতায়াত করত। এখন যাত্রীদেরও ভোগান্তি হচ্ছে, আমাদেরও ভোগান্তি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে লঞ্চঘাটটিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন সেখানে এসে পরিদর্শন করেছেন। বালুভর্তি ব্যাগ ফেললে ঘাটটি ভাঙত না।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা নদীবন্দরের উপপরিচালক সেলিম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরে প্রবল স্রোতের কারণে লঞ্চঘাটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাত্রী পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দ্রুত লঞ্চগুলো ২ নম্বর ফেরিঘাটে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। লঞ্চঘাটটি অন্যত্র কীভাবে স্থাপন করা যায় এবং লঞ্চঘাটটি কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, তা নিয়ে প্রাথমিক কাজ চলছে।