সুজানগর উপজেলার চাষিরা পাবনা-সুজানগর সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেন। আজ বুধবার বিকেলে
সুজানগর উপজেলার চাষিরা পাবনা-সুজানগর সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেন। আজ বুধবার বিকেলে

পাবনায় পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে কৃষকদের বিক্ষোভ

পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ও ন্যায্যমূল্যের দাবিতে পাবনায় বিক্ষোভ করেছেন পেঁয়াজচাষিরা। আজ বুধবার বিকেলে পাবনা জেলার সর্বোচ্চ পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকা সুজানগর উপজেলার চাষিরা পাবনা-সুজানগর সড়ক অবরোধ করে এই কর্মসূচি পালন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পেঁয়াজচাষিরা এসে উপজেলা সদরে জমায়েত হন। এরপর তাঁরা পাবনা-সুজানগর সড়কে কিছু পেঁয়াজ ছিটিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে সড়কটিতে কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ শেষে একপর্যায়ে চাষিরা বাড়ি ফিরে যান।

বিক্ষুব্ধ পেঁয়াজচাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁদের রোপণ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজ এক দফা নষ্ট হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বাড়তি মূল্যে পেঁয়াজের বীজ কিনে রোপণ করতে হয়েছে। এতে এ মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। বর্তমানে মাঠ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে সরকার ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের বড় দরপতন হয়েছে।

কৃষকদের দাবি, এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম প্রতি মণ এক থেকে দেড় হাজার টাকা কমে গেছে। ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরের প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ উঠছে না। অন্যদিকে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ না করা হলে কৃষকেরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই তাঁরা অবিলম্বে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ও পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য দাবি করছেন।

উপজেলার চরতারাপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি ফিরোজ প্রামাণিক বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। আশা ছিল প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ হবে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন ৪০ থেকে ৪৫ মণ হয়েছে। ফলে বর্তমানে বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকের ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।

বাহিরচর গ্রামের পেঁয়াজচাষি মো. রাব্বি হোসেন বলেন, ‘এ বছর পেঁয়াজের কন্দ (বীজ) অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে আবার খেত নষ্ট হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় দফা রোপণ করতে খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি সার, কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে। অথচ এই সময়ে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কারণে আমাদের পেঁয়াজের দাম পাচ্ছি না। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই।’

সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল আলম বলেন, ‘হঠাৎ করেই বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে দাম কিছুটা কমেছে। এই দামে নিশ্চিতভাবেই কৃষকের লোকসান হচ্ছে। আমরা চাষিদের অল্প অল্প করে পেঁয়াজ বাজারে আনতে পরামর্শ দিয়েছি। পরিস্থিতি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’