খুলনার কয়রা উপজেলার মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশ। গত রাতের ভাঙনে নদীতে ধসে পড়ে বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ। আজ শুক্রবার সকালে তোলা
খুলনার কয়রা উপজেলার মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশ। গত রাতের ভাঙনে নদীতে ধসে পড়ে বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ। আজ শুক্রবার সকালে তোলা

খুলনার কয়রা

‘রাইতের বিপদ কাটিছে, তবে বর্ষার আগে বাঁধের কাম শেষ না হলি বড় বিপদ’

রাতের নীরবতা ভাঙল বেড়িবাঁধ ভাঙনের শব্দে। আতঙ্ক নিয়ে বাঁধের দিকে ছুটে যান কয়েকজন। কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ নদীতে মিলিয়ে যেতে দেখেন তাঁরা। পরে গ্রামবাসীর তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টায় রিং বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে লোকালয়ে লোনাপানির প্রবেশ ঠেকানো গেছে। তবে এখনো ভাঙনের আশঙ্কা থাকায় বিষয়টির সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এ ঘটনা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে; খুলনার কয়রা উপজেলার মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামে।  

সুন্দরবনঘেঁষা আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের মোহনার সংলগ্ন বাঁধটিতে এক মাস আগেই ফাটল দেখা যায়। বিষয়টি পাউবোকে জানালেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিদারুল আলম। তিনি বলেন, অল্প কিছু বস্তা ডাম্পিং করে দায়সারা কাজ করা হয়েছিল তখন। তাই গত রাতে আগের ফাটলটি হঠাৎ বড় হয়ে বাঁধ ধসে গেছে।

ভাঙনের খবর শুনে রাতেই ঘটনাস্থলে যান মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান ও খায়রুজ্জামান। তাঁরা গিয়ে দেখেন, বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে নদীতে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ছে। তাঁদের মতে, দ্রুত রিং বাঁধ নির্মাণ করায় লোকালয় প্লাবিত হয়নি। তবে জোয়ারের পানি যেভাবে বাড়ছে, এতে দ্রুত সংস্কারকাজ না করা হলে আবারও ভাঙনের ঝুঁকি আছে।

আজ শুক্রবার সকালে মাটিয়াভাঙ্গার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চোখের সামনে দিয়ে বাঁধটা নদীতে চইলে গেল। মনে হচ্ছিল, আজই বুঝি সব শেষ-বাড়ি-ঘর সবকিছুই বুঝি তলাই যাবেনে।’

পাউবো সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের দুটি পোল্ডারে (১৪ / ১ ও ১৩-১৪ /২) প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে উচ্চতা-প্রশস্ততা বৃদ্ধি, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও চর বনায়নের কাজ করা হচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গার ভাঙন এলাকাটিও ওই প্রকল্পের অংশ।

আজ সকাল থেকে জোরেশোরে বাঁধটি মেরামতের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাজ চলমান অবস্থায় গত রাতে বাঁধটি ভেঙে গেছে। কংক্রিট ব্লক নির্মাণের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতেই বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় এলাকা প্লাবিত হয়নি।

তবে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, কাজের ধীর গতি, অসমাপ্ত মাটি ভরাট, কোথাও সিসি ব্লক না দেওয়া, আবার কোথাও বালুর বস্তা ফেলার বাকি আছে। এসব কারণে বাঁধের অনেক স্থানে ধস বেড়েছে এবং তৈরি হয়েছে ভাঙনের ঝুঁকি।

দক্ষিণ বেদকাশীর বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, ‘শুধু মাটিয়াভাঙ্গা না, এলাকার অনেক জায়গায় কাজ না করি ফেলাইয়ে রাখা হইছে। রাইতের বিপদ কাটিছে। তবে আগামী বর্ষার আগে ঠিকমতো বাঁধের কাম শেষ না হলি বড় বিপদ হবেনে।’

পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তবে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বরাদ্দ বিলম্ব, বালু-মাটির সংকট এবং নদীর ভাটার সময়ের ওপর নির্ভর করতে হওয়ায় কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার বাঁধে সকাল কাজ শুরু হয়েছে। এখন আর তেমন ঝুঁকি নেই।