
জরুরি কাজে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন মো. সাইমন। কাজ সেরে ফেরার সময় টিকিট করতে এসে দেখেন, বাসের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। কাউন্টারের মুঠোফোন নম্বরগুলোয় ফোন দিলেও কেউ ধরছেন না। আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় বাসের টিকিট কাউন্টারের সামনে দেখা হয় মো. সাইমনের সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ এসে দেখি কাউন্টার বন্ধ। তাঁরা ধর্মঘট করুন, আর যা–ই করুন, যাত্রীদের কথাটা মাথায় রাখা উচিত। ভোগান্তির শেষ নেই।’
বেতন বৃদ্ধি, কল্যাণ তহবিলসহ নানা দাবিতে ৩৬ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করছেন চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটের চারটি বাস কোম্পানির চালক ও সহকারীরা (হেলপার)। আজ সকাল ছয়টা থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা। পরিবহনগুলো হলো মারছা পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, পূরবী পরিবহন ও স্বাধীন ট্রাভেলস। বাসগুলো চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে চলাচল করে। যেখানে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের বেশি।
শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতেও চালক ও হেলপারদের বেতন বাড়েনি। এখনো প্রতি ট্রিপে (যাওয়া অথবা আসা) হেলপাররা ২৭৫ টাকা ও চালকেরা ৫৫০ টাকা করে পান। প্রতিদিন একটি বা দুটি ট্রিপ থাকে। এর বাইরে কোথাও কোনো দুর্ঘটনা হলে মালিকপক্ষ খোঁজ নেয় না। শ্রমিকদের জন্য কোনো কল্যাণ তহবিল নেই।
জানতে চাইলে মারছা পরিবহনের চালক আবদুল আজিজ বলেন, ‘আট বছর ধরে চাকরি করছি। যে বেতন পাই, তা দিয়ে বর্তমান সময়ে নিজে খাব, সংসার চালাব নাকি ছেলেমেয়ের পড়ালেখায় ব্যয় করব? এক বেলা ভাত খেতেই লাগে ১০০ টাকার বেশি। সেখানে একজন চালকের দিনে বেতন ৫৫০ টাকা ও হেলপারের মাত্র ২৭৫ টাকা।’
আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুছা প্রথম আলোকে বলেন, ন্যায্য দাবি আদায়ে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এর আগে গত ১৯ আগস্টও কর্মবিরতিতে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের কাছে পরে সময় চেয়ে নেওয়া হয়। দাবি আদায়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী বাসের মধ্যে এ চারটি বিরতিহীন (ক্লোজ ডোর) পরিবহন। এর বাইরে নগর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন উপজেলায় কিছু স্থানীয় পরিবহন চলাচল করে। এ চারটি পরিবহন বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েছেন কক্সবাজারমুখী যাত্রীরা। তাঁদের ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে। এতে যাতায়াত ব্যয় প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি লাগে।
আজ সকাল নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় দেখা যায়, এ চারটি বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ। সেখানে টিকিটের জন্য এসে মানুষ ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়ার বাসে উঠছেন, সেখান থেকে কক্সবাজারের বাস ধরবেন। অধিকাংশ যাত্রী মুঠোফোনে ট্রেনের টিকিটের খোঁজ নিচ্ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে পূরবী পরিবহনের কর্ণধার কাজল কান্তি দাশকে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।