তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় তারকা পারসা ইভানা। রিয়্যালিটি শো ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে ২০১৪’তে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। নাচের প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে অভিনয় শুরু করেন। নাচ ছাপিয়ে তখনই স্বপ্ন দেখতেন, একদিন অভিনেত্রী হবেন। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আগেই। ইভানা এখন এই সময়ের ব্যস্ত তারকাদের একজন।
পারসা ইভানার দাদাবাড়ি চট্টগ্রামের লাভ লেন এলাকায়, নানাবাড়ি রাউজানে। দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ি ঘিরে রয়েছে এই তারকার অনেক স্মৃতি। জানালেন, ছোটবেলায় ঈদুল আজহায় সবচেয়ে বেশি মজা হতো। আর মজা হতো বছরের শেষে যখন স্কুল ছুটি হতো। রাউজানে নানাবাড়ির স্মৃতির কথা মনে করে ইভানা বলেন, ‘আমাদের কাজিন গ্রুপ ছিল। সবাই মিলে তখন মাটির চুলায় নিজেরা রান্না করতাম। নানা খেলাধুলায় মেতে থাকতাম। চট্টগ্রামে দারুণ মজার ছিল সেসব দিন।’
ঢাকার কোনো রেস্তোরাঁয় যখন চট্টগ্রামের জনপ্রিয় আঞ্চলিক খাবার দেখেন, তখনই চট্টগ্রামের কথা মনে পড়ে পারসা ইভানার। চোখের সামনে তখন ভেসে ওঠে আঞ্চলিক খাবার। অনেক ধরনের পিঠাও তাঁর প্রিয় তালিকায় রয়েছে, ছোটবেলায় খাওয়া সেসব পিঠার নাম মনে করতে পারেন না তিনি। চট্টগ্রামের খাবারের মধ্যে ইভানার প্রিয় তালিকায় রয়েছে মেজবানি গোশত, কালাভুনা, লইট্টা মাছ। চট্টগ্রামের এসব খাবার এখন ঢাকায়ও পাওয়া যায়, প্রায় সময় এসব খাবারের স্বাদ নেওয়া হয়। পারসা ইভানা বলেন, ‘চট্টগ্রামের খাবার দেখলে বা কথা মনে হলেই জিভে পানি এসে পড়ে। ছোটবেলার কথাও মনে পড়ে যায়। দাদা-নানাবাড়িতে কত ধরনের খাবার যে খেয়েছি।’
পারসা ইভানার দাদাবাড়ি ও নানাবাড়িতে এখন আর কেউ থাকেন না। সবাই দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। ইভানা জানালেন, ‘আমার আব্বুর পরিবার বড়। চাচা-ফুফুদের কেউ কেউ মারা গেছেন। যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের কেউ ঢাকায় আবার কেউ বিদেশে যেমন ইতালি, ইউকে ও আমেরিকায়। নানাবাড়িরও একই অবস্থা। তাই এখন আর চট্টগ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়া হয় না। কিন্তু খুব মিস করি, সেসব দিন।’ তিনি বলেন, আত্মীয়স্বজন না থাকলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাওয়া হয় তাঁর। মাসখানেক আগেও একবার চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। গেলেই ইচ্ছে করে দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ি ঘুরে আসতে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তা হয়ে ওঠে না।
ঘোরাঘুরি পারসা ইভানার খুব পছন্দ। তারকা জীবনে ঢুকে যাওয়ার পর শুটিংয়ের কারণে নানা জায়গায় যেতে হয়। তবে অবসরে নিজেও ঘুরতে বের হন। দেশ-বিদেশে তাঁর অনেক জায়গা পছন্দের। দেশ-বিদেশে ঘোরাঘুরি করলেও চট্টগ্রামের দুটি জায়গা তাঁর খুব প্রিয়। ইভানা বললেন, ‘যখনই আমরা চট্টগ্রাম যেতাম, নেভাল এরিয়ায় একবার হলেও ঢুঁ মারতাম। ওই জায়গাটা আমার মনে শান্তি এনে দেয়। কত যে স্মৃতি সেই জায়গা নিয়ে। কাপ্তাই লেকও বেশ ভালো লাগার একটি জায়গা। কী সুন্দর, যাঁরা ঘুরতে যাননি, তাঁরা কখনো বুঝবেন না।’
গত কয়েক বছরে ইভানা হয়ে উঠেছেন ছোট পর্দার ব্যস্ত অভিনেত্রীদের একজন। তাঁকে পাওয়া গেছে নানামাত্রিক চরিত্রে। তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন ব্যাচেলর পয়েন্ট ধারাবাহিকে অভিনয় করে। দর্শকের নজরে আসার পর নতুন স্বপ্ন দেখতে থাকেন সেরা নাচিয়ের মুকুটজয়ী এই মেয়েটি। কথাপ্রসঙ্গে ইভানা জানান, তাঁর ভীষণ ইচ্ছে ছিল ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’–এ যুক্ত হবেন। অবশেষে হন। ইভানা বললেন, ‘সত্যি বলতে, মন থেকে সব সময় চাইতাম বলেই হয়তো সম্ভব হয়েছে।’
২০২১ সালের ভালোবাসা দিবসে অমির দই নাটকে শাবনূর চরিত্র দিয়েও আলোচনায় এসেছেন পারসা ইভানা। একই নির্মাতার ঈদের জন্য বানানো ব্যাড বাজ ও ব্যাচেলর রমজান নামে আরও দুটি নাটকে অভিনয় করেন ইভানা। অমির নাটক ছাড়াও মাবরুর রশিদ বান্নাহ পরিচালিত রেসপেক্ট, সাব্বির হোসেন পরিচালিত বিভ্রম ও পনির খান পরিচালিত নার্ভাস ব্রেকডাউন আলোচিত।
ইভানার অভিনয়ে হাতেখড়ি কাজ করতে করতে। তবে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে তৈরি করতে চান। তাই এ বছরের শুরুর দিকে কয়েক মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নাচ এবং অভিনয়ের ওপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জানালেন, নিউইয়র্কে দ্য ফ্রিম্যান স্টুডিওতে অভিনয় কোর্স ছিল তিন মাসের আর স্টেপস অন ব্রডওয়েতে নাচের ওপর ১৫টি কর্মশালা করেছেন।
ভরতনাট্যমে পারসা ইভানার বেশ কিছু পুরস্কার আছে। ২০১৪ সালে চ্যানেল আইয়ের সেরা নাচিয়ে প্রতিযোগিতায় যখন চ্যাম্পিয়ন হন, তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাই তো নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার সঙ্গে যুক্ত রাখতে চান। ইভানা বলেন, ‘শুধু এবারই যে প্রথম দেশের বাইরে গিয়ে শিখছি, তা নয়; লন্ডন থেকে আকরাম খান যখন এসেছিলেন, তাঁর কাছেও নাচের তালিম নিয়েছি। ওইটাতে অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। নতুন যেকোনো কিছুর ব্যাপারে আমার আগ্রহ। শেখার তো আসলে শেষ নেই। আমি একদম শেষ বয়স পর্যন্ত শিখতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় ভাবি, আমি তো জিতেই গেছি, আমার আর শেখার কিছু নেই। এখন আমি শুধুই শেখাব। অনেকে আমাকে বলে, আপু, আপনার কাছে ড্যান্স শিখতে চাই। কিন্তু আমি তো নাচের শিক্ষক নই। এখন এসে মনে হয়, হয়তো চাইলে দু-তিন দিনের কর্মশালা করাতে পারব। কিন্তু তারপরও ওই আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য যখনই দেশের বাইরে কোথাও যাই, সেখানকার সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে চাই। সে জায়গা থেকেই নাচের কর্মশালা করা, একটা চর্চার মধ্যে থাকা আর কী।’
অভিনয় প্রসঙ্গে পারসা ইভানা বলেন, ‘সত্যি বলতে, অভিনয় শিখে আমি অভিনয় করতে আসিনি। সিনিয়রদের কাছ থেকে, পরিচালকদের কাছ থেকে, মুভি দেখে, বই পড়ে যা বুঝেছি, তা-ই আয়ত্ত করার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি শিখতে চাই। ডিসিপ্লিন শিখতে চাই। একটা কাজের পেছনে ম্যানার্স থাকে, ডিসিপ্লিন থাকে। দেখা যায়, আমরা যখন একটা শুটিংয়ে যাই, চট করে শুটিং করি। বলি, এরপর কী, চলো যাই—এ রকম টাইপ। এর বাইরেও একজন মানুষকে শিল্পী হতে হলে কত ধরনের ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকতে হয়, কত পরিশ্রম করতে হয়, সে বিষয়গুলো জানার জন্য অভিনয়ের কর্মশালা করা।’ তিনি বলেন, ‘এমনও অনেক মানুষ দেখেছি, শুধু নিজেদের উন্নয়নের জন্য বছরের পর বছর কোর্স করছে। অথচ তিন মাসের পরও আমার মনে হয়েছে কিছুই শিখতে পারিনি। আরও কয়েক মাস যদি থাকতে পারতাম, তাহলে আরও কিছু জানতে পারতাম। দ্য ফ্রিম্যান স্টুডিওতে যে কোর্সটি করেছি, ওটার নাম বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরা অ্যান্ড প্রিপারেশন। আম্মু যেহেতু ওখানে থাকেন, প্রতিবছর যাওয়া হয়, এখন থেকে যখনই যাব, একটা করে কোর্স করব ভাবছি।’