বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের দপ্তরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রায় ৫০টি গোপন নথির ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। গত সোমবার গভীর রাতে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) মো. মিজানুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে এসব নথি শেয়ার করেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অবশ্য এসব নথি ফেসবুকের স্টোরিতে শেয়ার করার কিছুক্ষণ পরেই মুছে ফেলেন পিএস।
এর মধ্যে অনেকে সেসব নথির স্ক্রিনশট নিয়ে তা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ফেসবুকে প্রকাশিত ফাইলগুলোর মধ্যে ছিল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতির প্রস্তাব–সংক্রান্ত নথি, ব্যক্তিগত ফাইল, শাস্তিমূলক তদন্ত প্রতিবেদন, অডিট আপত্তির নথি, শিক্ষার্থীদের মামলা–সংক্রান্ত কাগজপত্র, এমনকি কর্মকর্তাদের চাকরির আবেদনপত্র ও ব্যক্তিগত ছবি।
অভিযোগের বিষয়ে পিএস মিজানুর রহমানের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রেজিস্ট্রার দপ্তরের সেকশন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি উপাচার্যের কাছে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলাম, এর কপি কেবল অফিসের গোপন নথিতে ছিল। অথচ সেই আবেদনপত্রের ছবি ফেসবুকে দেখা গেছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক গোপনীয়তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’
তিনজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনা আবারও সামনে এনেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি ও তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে কে কী তথ্যের অধিকার রাখবে, গোপন নথি কাদের অ্যাকসেসে থাকবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে—এসব বিষয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই কোনো স্পষ্ট নীতিমালা নেই। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ঘটনাটি প্রমাণ করেছে, গোপন নথির নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণহীনতা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।