কিশোরগঞ্জে ঝড়ে উপড়ে গেল প্রাচীন বটগাছ, মন খারাপ সবার

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বটতলা মোড়ের পুরনো বটগাছটি উপড়ে পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে শহরের হাসপাতাল বটতলা মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দমকা বাতাসে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বটতলা মোড়ের প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো একটি বটগাছ উপড়ে পড়েছে। এমন দৃশ্যে ওই এলাকায় মানুষের মন খারাপ। বটগাছটির এমন পরিণতির জন্য তাঁরা শুধু ঘূর্ণিঝড়কেই দায়ী করছেন না। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় গাছটির শিকড় কেটে আগেই গাছটির গোড়া দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল, ফলে ঘূর্ণিঝড় সামাল দিতে পারেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপড়ে পড়ে বটগাছটি। এ সময় আশপাশে লোকসমাগম ছিল না। তবে গাছের নিচে নির্মাণ করা ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ বক্সটি ভেঙে যায়। এ ছাড়া পাশে অস্থায়ী একটি চায়ের দোকানের ছাউনি ভেঙে গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, বটগাছটিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল এখানকার বাজার। গাছটির কারণেই এ জায়গার নামকরণ হয় ‘বটতলা মোড়’, যা এখন ‘হাসপাতাল বটতলা মোড়’ নামে পরিচিত। সেই বটতলা মোড়ের বটগাছটি হঠাৎ উপড়ে পড়ায় অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি শত শত পাখির অভয়ারণ্য ছিল এ গাছ।

কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য বইয়ের লেখক, জেলা পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক ৭৪ বছর বয়সী মু. আ. লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, গাছটির বয়স প্রায় ২০০ বছর। তিনি নিজে ছোটবেলায় তাঁর বাবার হাত ধরে এই বটগাছের নিচ দিয়ে হেঁটেছেন। ৮০ বছর বয়সে মারা যাওয়া তাঁর বাবা ছোটবেলা থেকে গাছটি দেখেছেন।

বটগাছটি নিয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণা করে সত্তরোর্ধ্ব রহিম মিয়া বলেন, নরসুন্দা নদীর কিনারে এ বটগাছের নিচে গরমে ছায়াঘেরা পরিবেশে বসে অনেকেই নির্মল ও প্রশান্তির বাতাস খেয়েছেন। এই বটগাছকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বটতলা মোড়ের দোকানপাট।
শওকত উদ্দিন, নুরুল হক, শাখাওয়াত হোসেনসহ অন্তত ১০ জন জানান, কিশোরগঞ্জ শহরের ইতিহাসের সাক্ষী এই বটগাছ। গাছটি হঠাৎ ভেঙে পড়ায় তাঁদের মন খারাপ। এই গাছের নিচে তাঁদের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। এখন বৃদ্ধকাল পার করছেন অনেকে। গাছটি এভাবে উপড়ে পড়বে ভাবতেও পারেননি তাঁরা।

শওকত উদ্দিন বলেন, ‘শুধু ঝড়ের তাণ্ডবে হয়েছে এমনটা না। এটার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। দিনে দিনে এ গাছটির শিকড় কেটে এটাকে মেরে ফেলা হচ্ছিল। ফোয়ারা নির্মাণ, ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ বক্স তৈরি এবং বিভিন্ন দোকানপাট করাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিকড় কেটে গাছটির গোড়া দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।’

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছটি উপড়ে পড়ার পর সুযোগসন্ধানী অনেকেই গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ বাধাও দিচ্ছে না। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, গাছটি উপড়ে পড়ার সংবাদ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ২২-২৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে আজ দুপুরের দিকে জেলা সদরের কিছু অংশে বিদ্যুৎ এসেছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শহর ছাড়া জেলার বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন ছিল।