পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে বিদ্যালয় ভবনটি
পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে বিদ্যালয় ভবনটি

যেকোনো সময় পদ্মায় বিলীন হতে পারে শরীয়তপুরের বিদ্যালয়টি

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নে পদ্মা নদীর চরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের কবলে পড়েছে। বিদ্যালয়টির মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে এখন ভবনটিও ভাঙনের মুখে আছে। এই আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ভবনের মালামাল।

বিদ্যালয়টির নাম ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভেঙে পড়ার আতঙ্কে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম (পাঠদান) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের পাঠদান কোথায় হবে, সেই দুশ্চিন্তায় আছেন শিক্ষকেরা।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার কাচিকাটি ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও অন্যদিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকার চারদিকে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে সেখানে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল।

৪ সেপ্টেম্বরের পর আর ওই বিদ্যালয়ে আর কোনো পাঠদান কার্যক্রম চালানো হয়নি। আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুনে সে বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষা করতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

১৫ দিন ধরে ওই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমির মাঠ বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয় ভবনের মাটি সরে গেছে। যেকোনো সময় ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ওই ভবনে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ আছে। ৪ সেপ্টেম্বরের পর আর ওই বিদ্যালয়ে আর কোনো পাঠদান কার্যক্রম চালানো হয়নি। আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

চরবানিয়াল এলাকার বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরান প্রথম আলোকে বলে, ‘আমাদের বাড়ি ছিল মুন্সিগঞ্জে। নদীভাঙনের কারণে আমার পরিবার গৃহহীন হয়ে কাচিকাটা এলাকায় আশ্রয় নেয়। তিন বছর ধরে আমি বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করছি। এখন সেই বিদ্যালয়টিও ভাঙনের কবলে পড়েছে। আমাদের পড়ালেখা বন্ধ, কবে আবার বিদ্যালয় চালু হবে, তা জানি না। আমরা চাই, দ্রুত আমাদের বিদ্যালয় চালু হোক।’

বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য আমি গত জুন মাসে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এখন এই শিশুদের কোথায় কীভাবে পাঠদান করাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
মোহাম্মদ আল মামুন, প্রধান শিক্ষক, উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভেদরগঞ্জ, শরীয়তপুর

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সব জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভবনটিও ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গতকাল রোববার ভবনের বিভিন্ন মালামাল সরিয়ে নিয়েছি। যেকোনো সময় ভবনটি নদীতে ভেঙে পড়তে পারে। বিদ্যালয় ভবনের এমন অবস্থার কারণে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য আমি গত জুন মাসে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এখন এই শিশুদের কোথায় কীভাবে পাঠদান করাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

বিদ্যালয়টির সভাপতির দায়িত্বে আছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আল মুজাহিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের কবলে পড়েছে, এমন খবর পেয়ে গত সপ্তাহে তিনি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হোক, কিন্তু তা হয়নি। এখন যেকোনো সময় ভবনটি পদ্মার বুকে ধসে পড়তে পারে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আবদুল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয় ভাঙনের কবলে পড়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ আছে, এমন খবর এখনো পাইনি। আমি যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি, তাই ওই এলাকায় পরিদর্শন করব। আর কীভাবে, কোথায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা যায়, তা নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেব।’