ট্রেন
ট্রেন

নতুন ট্রেন চালুতে বাধা ইঞ্জিন–সংকট

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই রুটে প্রতিদিন গড়ে ১৩ জোড়া (২৬টি) ট্রেন চলাচলের কথা। চালুর এক বছর পার হলেও বর্তমানে চলছে মাত্র তিন জোড়া ট্রেন। এই রুটে আরও চার জোড়া ট্রেন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। কিন্তু এতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইঞ্জিন–সংকট।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল বর্তমানে চলাচলরত ট্রেনের রুট বাড়ানো এবং নতুন ট্রেন চালুর বিষয়ে একটি প্রস্তাব ৯ জানুয়ারি রেল ভবনে পাঠিয়েছে। প্রস্তাবে বিদ্যমান ট্রেন চলাচলের সময় পরিবর্তনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের ওয়ার্কিং টাইম টেবিল-৫৪–তে এসব ট্রেনের সময়সূচি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে পূর্বাঞ্চলের প্রস্তাবে।

ওয়ার্কিং টাইম টেবিল হচ্ছে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি। রেলের সর্বশেষ ওয়ার্কিং টাইম টেবিল-৫৩ কার্যকর হয় ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে। নতুন সময়সূচি আগামী মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন ট্রেন চলাচলের সময়, গন্তব্যে পৌঁছার সময়, রুট পরিবর্তনসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানান রেলের কর্মকর্তারা।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত মহানগর গোধূলী-মহানগর প্রভাতী, তূর্ণা এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী কমিউটারের রুট পরিবর্তন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রুট নির্ধারণ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চলাচলরত মেঘনা এক্সপ্রেসকেও কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমানে কক্সবাজার রুটে তিন জোড়া ট্রেন চলাচল করে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ঈদ স্পেশাল। অবশ্য ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঈদ স্পেশালের পরিবর্তে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন দুই জোড়া ট্রেনের চলাচল শুরু হবে। এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেস। অর্থাৎ চার জোড়া ট্রেন হবে। রেলওয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী ট্রেন চলাচল শুরু হলে কক্সবাজার রুটে ট্রেনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮ জোড়া বা ১৬টি।

এদিকে ঢাকা-নরসিংদী রুটে ১ জোড়া এবং ঢাকা-ভৈরববাজার পর্যন্ত ২ জোড়া নতুন ট্রেন পরিচালনার জন্য নতুন সময়সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লাকসাম-নোয়াখালী রুটে আরও এক জোড়া ট্রেন পরিচালনা করতে চায় রেল।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজার রুটে ট্রেনের টিকিটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে পর্যটন শহরে যাতায়াতের জন্য ট্রেনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন যাত্রীরা। তবে চাহিদা অনুযায়ী ট্রেন না থাকায় তাঁদের হতাশ হতে হচ্ছে। যাত্রী–চাহিদা বিবেচনা করে ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন পর্যন্ত চলাচলরত চার জোড়া ট্রেনকে কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য নতুন সময়সূচিতে ট্রেনগুলো পরিচালনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা যাবে কি না, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন নতুন ট্রেন চালু এবং রুট বর্ধিতকরণের বিষয়ে তাঁরা আন্তরিক। এ জন্য চার জোড়া ট্রেনকে বর্তমান রুট থেকে কক্সবাজার রুট পর্যন্ত বর্ধিত করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইঞ্জিন–সংকট। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন পাওয়া গেলে ট্রেনগুলো চালানো যেত।

রেলওয়ের ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলোর জন্য অন্তত ১১৬টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। কিন্তু কাগজে-কলমে আছে ১০০টির মতো। নিয়মিত পাওয়া যায় ৮৫ থেকে ৯০টি। এর মধ্যে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে চারটি ইঞ্জিন এ মুহূর্তে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইঞ্জিন–সংকটের কারণে ট্রেন চলাচলে নানা বিপত্তি তৈরি হয়।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অধীন বর্তমানে ২৭ জোড়া আন্তনগর, ৮ জোড়া মেইল, ২৬ জোড়া কমিউটার, ১৬ জোড়া লোকাল, ৪ জোড়া পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে। ইঞ্জিন–সংকট ও ত্রুটির কারণে যাত্রাপথে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে যাত্রীদের। মাঝপথে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

যাত্রার সময় পরিবর্তন হবে চার ট্রেনের

বর্তমানে সুবর্ণ এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে সকাল সাড়ে ৭টায়। এই সময় আধা ঘণ্টা এগিয়ে এনে সকাল ৭টায় ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছাড়ে বিকেল পৌনে ৫টায়। এখন ছাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বিকেল ৫টায়। চট্টলা এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঢাকার উদ্দেশে ছাড়লেও এখন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল সোয়া ৭টা। আর কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী পর্যটক এক্সপ্রেস রাত ৮টার পরিবর্তে পৌনে ৮টায় ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।