
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রকৃত সত্য। তাদের প্রতিবেদন পড়ে জানা যায় অনেক কিছু। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় কক্সবাজার জেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। তাঁরা প্রথম আলোর কাছে প্রত্যাশার কথাও জানান।
এ ছাড়া বক্তারা কক্সবাজার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ, পাহাড় কাটা, পানির স্তর কমে যাওয়া, ১৪ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়শিবির—সব মিলিয়ে কক্সবাজারের পরিবেশ এখন চরম ঝুঁকিতে। একই সঙ্গে সমুদ্রপথে মানব পাচার, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা অনুপ্রবেশ, বন-পাহাড়-প্যারাবনের ওপর আগ্রাসন—এসব মোকাবিলায় জরুরি বিশেষ উদ্যোগের প্রয়োজন।
সুধী সমাবেশে বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল বলেন, ‘কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়ক চার লেন নয়, আমি ১০ লেনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু পরিবেশ মন্ত্রণালয় আপত্তি জানিয়েছে—পাহাড় কাটার কারণে। পরিবেশদূষণের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত সব সময়ই তাঁরা নেন।’
মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কক্সবাজারের অর্থনীতিকে বহুগুণ বড় করবে উল্লেখ করে লুৎফর রহমান বলেন, পাহাড় থেকে পলি পড়ে সমুদ্রে নতুন ভূমি তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করলে বিদেশের মতো কক্সবাজারেও সাতটি জায়গা উদ্ধার সম্ভব।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘প্রথম আলোর ওপর চাপ নতুন নয়। বাংলাদেশে যেমন হয়, যুক্তরাষ্ট্র-ভারতেও ক্ষমতাসীনদের আক্রমণের শিকার হয় গণমাধ্যম। প্রথম আলো অস্ত্রহীনের অস্ত্র, ক্ষমতাহীনের ক্ষমতা, ভাষাহীনের ভাষা। তিনবার বিভিন্ন সরকার বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছে। তারপরও প্রথম আলো বন্ধ হয়নি পাঠকের সমর্থনের কারণেই। আর পাঠক সমর্থন করেছে সত্যতার জন্য। কাজেই সত্যই সাহস।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম আলোর ভাষার প্রাঞ্জলতা ও ফন্ট আলাদা। সোনাদিয়ায় প্যারাবন কেটে ঘের-রিসোর্ট করার ঘটনা প্রথম আলোর রিপোর্ট থেকেই জানতে পেরেছিল প্রশাসন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, ছাপার অক্ষরের ওপর মানুষের আস্থা বেশি। প্রথম আলো যেন ৬-কে ৬ এবং ৯-কে ৯-ই দেখায়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা তাঁকে সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় অনুপ্রাণিত করেছে, যা কর্মজীবনেও সহায়তা করেছে। প্রথম আলো স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্নের বাস্তবায়নও করে। কিশোর আলো কিশোর মনকে, ‘নকশা’ নারীকে সাজিয়ে দেয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামাণিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কক্সবাজারে লবণাক্ততা বাড়ছে। সবার যৌথ লড়াই ছাড়া সমাধান নেই।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, সুজনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী, বাপার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, সাবেক পৌর কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী, নারীনেত্রী ও কবি শামীম আকতার, সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সুজাউদ্দিন, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরামের সভাপতি আবদুল শুক্কুর, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা, তরুণ উদ্যোক্তা তানিমা কবির প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস।
সুধী সমাবেশ শেষে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। এ ছাড়া শুরুতে বন্ধুসভার সদস্যরা জাতীয় সংগীত পরিবেশেন করেন। অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে এবং প্রথম আলোর ইনমা পুরস্কার নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।