ময়মনসিংহে গৌরীপুরে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া ও মনোনয়ন বঞ্চিত নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। রোববার বিকেলে
ময়মনসিংহে গৌরীপুরে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া ও মনোনয়ন বঞ্চিত নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। রোববার বিকেলে

ময়মনসিংহ-৩

বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় অসুস্থ হয়ে ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু

ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া এম ইকবাল হোসেইন ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতা আহম্মেদ তায়েবুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় অসুস্থ হয়ে তানজিল আহমেদ (৩০) নামে ছাত্রদলের এক কর্মী মারা গেছেন।

আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গৌরীপুর পৌর শহরের মধ্য বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। তাঁরা গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

মারা যাওয়া তানজিল আহমেদ উত্তর জেলা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তানজিলের বাড়ি ময়মনসিংহ নগরের কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সি রোডে।

তানজিল আহমেদ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের পর ময়মনসিংহ-৩ আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম ইকবাল হোসেইন। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে তাঁকে পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন মনোনয়নবঞ্চিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমানের সমর্থকেরা।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে আজ এলাকায় যান এম ইকবাল হোসেইন। তাঁরা গৌরীপুর কলেজ মাঠে বিকেলে সমাবেশের ডাক দেন। অন্যদিকে গৌরীপুর মধ্য বাজার এলাকায় মহিলা দলের উদ্যোগে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন করে মনোনয়নবঞ্চিত তায়েবুর রহমানের সমর্থকেরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওই এলাকা দিয়ে কলেজ মাঠে যাচ্ছিলেন ইকবাল হোসেইনের সমর্থকেরা। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মহিলা দলের সমাবেশের চেয়ার ও মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বেশ কয়েকটি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এদিকে সংঘর্ষের মধ্যে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তানজিল আহমেদ। তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা সাতটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, ওই যুবকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাস্থলেই ‘স্ট্রোক’ করে তিনি মারা গেছেন। তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়। রোববার বিকেলে গৌরীপুরের মধ্য বাজার এলাকায়

বিএনপি নেতা এম ইকবাল হোসেইন বলেন, ‘আমি পুলিশের অনুমতি নিয়ে আজ এলাকায় যাই। কিন্তু আমাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল প্রতিপক্ষের, এমনটি জানতে পারি। আমাদের লোকজন মিছিল নিয়ে আসার সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। আমাদের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সভা শেষ করেছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে পৌর বিএনপির সদস্যসচিব সঞ্জিত কুমার দাস বলেন, মহিলা দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ইকবাল হোসেইনের শোডাউন (শোভাযাত্রা) থেকে হামলা করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন। দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ইকবাল হোসেইন ও তায়েবুর রহমানের অনুসারীরা মারামারিতে জড়ান। দুই পক্ষেই কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার বলেন, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে অসুস্থ হয়ে তানজিম আহমেদ নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরে প্রাথমিকভাবে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

গৌরীপুরে বিএনপির আহ্বায়কসহ ৫ জনকে বহিষ্কার

এদিকে এই সংঘর্ষের পর দলের ৫ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ রোববার রাতে সাড়ে আটটার দিকে বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের অভ্যন্তরে হাঙ্গামা, সহিংসতা, রক্তপাতসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করার জন্য ময়মনসিংহ জেলাধীন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান (হিরন), যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম খোকন, সদস্য মাসুদ পারভেজ কার্জন; গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব সুজিত কুমার দাস ও যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুজিত কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহিষ্কারের কোনো চিঠি আমরা এখনো পাইনি। যদি এমনটি হয়ে থাকে, আমরা কেন্দ্রের কাছে যাব, কার দোষ তা তুলে ধরব। আমাদের কাছে সব ভিডিও ফুটেজ আছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ মহিলা সমাবেশে ইকবাল হোসেইনের লোকজন হামলা করেছে।’