ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরির পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী ও দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাঁর বাবা আমিরুল ইসলাম মো. আবদুল মালেক। ২০২৪ সালে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে হঠাৎ আলোচনায় আসা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। এ দলের প্রতীক একতারা।
গত সোমবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আমিরুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দেন। একই দিন তাঁর ছেলে হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে এনসিপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। এর আগে গত রোববার জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোটের সঙ্গে এনসিপি, এলডিপি ও এবি পার্টির নির্বাচনী সমঝোতার ঘোষণা আসে। জোটের হিসেবে এই আসনে জামায়াতে ইসলামী হান্নান মাসউদকে সমর্থন দিয়ে সরিয়ে দাঁড়াবেন এমন আলোচনা শোনা গেলেও জামায়াতের প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ মাহফজুল হকও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আবার হান্নানের বাবাও প্রার্থী হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ নিয়ে ভোটারদের মাঝে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে হঠাৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আলোচনায় আসে বিএসপি। ওই মাসে এই দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় নির্বাচন কমিশন। এরপর ২২ জুলাই প্রথমবারের মতো রাজপথে সমাবেশ করে দলটি। এ সমাবেশে দলটির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং রাজনীতিবিদদের জন্য অবমাননাকর।’ এ ছাড়া দলটির বিরুদ্ধে পারিবারিক সম্পত্তিকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল। এর পরও ওই বছরের আগস্টে দলটি নিবন্ধন পায়। নিবন্ধন পাওয়ার পর থেকেই দলটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন অভিযোগ ওঠে। ওই বছর সেপ্টেম্বরে দলটির সমাবেশে আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ আরও পাঁচ সংসদ সদস্য বক্তব্য দেন। ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেয় দলটি। তবে দলটির চেয়ারম্যান জামানত হারান।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আবার সক্রিয় হয়েছে দলটি। চলতি বছরের ৩০ আগস্ট সুন্নি মতাদর্শী ৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘বৃহত্তর সুন্নি জোট’ আত্মপ্রকাশ করে। এ জোটে বিএসপি রয়েছে। বাকি দুটি হলো বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। এ জোট থেকে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন ইসলামী বক্তা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী। তিনি সুফিবাদী সংগঠন বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সচিব।
বাবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদ। তিনি দাবি করেন তাঁর বাবা ‘ডামি প্রার্থী’। আজ বুধবার দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। এমন আরও ডামি প্রার্থী রয়েছে। প্রত্যাহারের সময় প্রত্যাহার করে নেবেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে হান্নান মাসউদের বাবা আমিরুল ইসলাম মো. আবদুল মালেকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইয়েদ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী প্রথম আলোকে বলেন, হান্নান মাসউদের বাবা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের দলের অনুসারী। হাতিয়ায় তাঁদের দলের অনেক অনুসারী রয়েছেন। তাই তাঁকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এই আসনে আরও যাঁরা
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী-৬ আসনে ছেলে আবদুল হান্নান মাসউদ, তাঁর বাবা আমিরুল ইসলাম মো. আবদুল মালেক ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন আরও ১২ জন। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মো. মাহবুবের রহমান, স্বতন্ত্র (বিএনপির বিদ্রোহী) তানভীর উদ্দিন (উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক), জাতীয় পার্টির এ টি এম নাবী উল্যাহ, স্বতন্ত্র (বিএনপির বিদ্রোহী) মোহাম্মদ ফজলুল আজিম (সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি), স্বতন্ত্র শামীমা আজিম (ফজলুল আজিমের স্ত্রী), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) মোহাম্মদ আবদুল মোতালেব, গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) মোহাম্মদ আজাহার উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর শাহ মোহাম্মদ মাহফজুল হক, জাতীয় পার্টির (জাপা) নাছিম উদ্দিন মো. বায়েজীদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নুরুল ইসলাম শরীফ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মোহাম্মদ আবুল হোসেন, স্বতন্ত্র মুহাম্মদ নুরুল আমীন।
জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই পরিবারের দুজন প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কোনো আইনি বাধা নেই। সে ক্ষেত্রে বাছাই প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করারও কোনো সুযোগ নেই।’
উল্লেখ্য নোয়াখালীর ছয়টি সংসদীয় আসনে ৮৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে জমা দিয়েছেন ৬২ প্রার্থী। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম চলবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ২২ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়ে চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।