রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে: রাকসুর ভিপি

দেশের শীর্ষস্থানীয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) ও শিবির নেতা মোস্তাকুর রহমান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল–পরবর্তী সমাবেশে এ কথা বলেন মোস্তাকুর রহমান। মোস্তাকুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি পদেও আছেন। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভ সমাবেশে মোস্তাকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আজকের এই প্রোগ্রাম থেকে ঘোষণা দিচ্ছি, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ এসব সুশীল সংবাদ পত্রিকাকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আমরা মনে করি, এই প্রোগ্রামে যদি প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকার কোনো সাংবাদিক আসেন, তাহলে এখনই এখান থেকে চলে যাবেন।’

বৃহস্পতিবার রাতে শিবির নেতা মোস্তাকুর যখন রাজশাহী থেকে সংবাদপত্র দুটি বন্ধের হুমকি দেন, তার কিছু সময় আগে ঢাকায় প্রথম আলোর কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা হয়। সন্ত্রাসীরা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের একটি অংশ ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা করে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে ডেইলি স্টারের বহু কর্মী আটকা ছিলেন। পরে কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করেন।

রাজশাহীতে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন উচ্ছেদ করে দিতে হবে উল্লেখ করে রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, ‘আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রকার আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শিক্ষক ক্লাসে আসতে পারবে না। আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, হাদি ভাইয়ের রক্ত থেকে লক্ষ হাদি জন্ম নিব, ইনশা আল্লাহ। ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশে মাত্র দুইটা। তার মধ্যে একটা রাজশাহীতে। আমরা বলব, রাজশাহীতে ভারতীয় হাইকমিশন উচ্ছেদ করে দিতে হবে।’

রাকসুর ভিপির এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘উনি কি রাকসুর ভিপি নাকি শিবিরের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্তত এইটুকু বুঝুক তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির অবস্থা! যাই হোক, রাকসু, জাকসুর ভিপিরা যা বক্তব্য দিচ্ছে, সেটা কি মবের উসকানি না?’

গত বৃহস্পতিবার রাতে শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ক্যাম্পাসের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক হয়ে মিছিলটি নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভেঙে সেখানে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের ঘোষণা দেন। পরে বুলডোজার দিয়ে কার্যালয়টি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাকসুর শিবির বলবে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার বন্ধ করে দিতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির বলবে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচী সব তছনছ করে দিতে হবে। উল্টো দিকে, নায়েবে আমির এসব কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হবেন। সাদিক কায়েম বলবে, একটি উসকানিদাতা গ্রুপ এগুলো করছে। ডাকসুর প্যাডে বিবৃতি দিয়ে এসবের নিন্দা জানাবে। এই খেলাটা বারবার রিপিট হবে। আর আমরা ধইঞ্চার মতো দেখব।’