আগুনমুখার ভাঙনে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি লঞ্চঘাটের সংযোগ সড়ক। সম্প্রতি তোলা ছবি
আগুনমুখার ভাঙনে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি লঞ্চঘাটের সংযোগ সড়ক। সম্প্রতি তোলা ছবি

পটুয়াখালী

আগুনমুখা গিলছে জনপদ 

আগুনমুখা নদীর দুই প্রান্তে পানপট্টি ও কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট। তীব্র স্রোতের কারণে সারা বছরই আগুনমুখা নদীর ভাঙন চলতে থাকে। 

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ও রাঙ্গাবালী উপজেলার কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় আগুনমুখা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। গত কয়েক বছরে আগুনমুখার ভাঙনে এই দুই উপজেলার পাঁচ শতাধিক বসতঘর, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়েছে। ভাঙনে পানপট্টি ও কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট এলাকার ২ হাজার ৫০০ ফুট নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে লঞ্চঘাটগুলো বেশ কয়েকবার সরাতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় লোকজন এ দুই এলাকায় নদীভাঙন ঠেকাতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগুনমুখা নদীর দুই প্রান্তে পানপট্টি ও কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট। গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষ এই নদীপথে চলাচল করে। অথচ অব্যাহত ভাঙনে লঞ্চঘাট ও এর আশপাশের এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে লঞ্চঘাট দুটিকে স্থানান্তর করে ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে।

ভাঙনকবলিত পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকা পরিদর্শন করেছি। ওই এলাকার ভাঙনরোধের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।
মো.আরিফ হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী, পাউবো,পটুয়াখালী কার্যালয়

পানপট্টি লঞ্চঘাটের ব্যবসায়ী বাবু হাওলাদার জানান, এ লঞ্চঘাট দিয়ে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার লোক লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিডবোটে আগুনমুখা নদী পারাপার হয়। এ ছাড়া ঢাকাগামী লঞ্চের যাত্রীরা এই লঞ্চঘাট দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু লঞ্চঘাট দুটি ভাঙনের কবলে পড়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা।

লঞ্চযাত্রী এনামুল হক জানান, ব্যবসার কাজে গলাচিপা ও জেলা শহরে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে সাতবার আসা-যাওয়া করতে হয়। স্থলপথ দিয়ে আনতে কোনো সমস্যা না হলেও লঞ্চঘাট দিয়ে আসা–যাওয়া করার সময় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী নিয়ে চলাচল করতে বেশি সমস্যা হয়। 

কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা মাহামুদ হাসান জানান, সারা বছরই উত্তাল থাকে আগুনমুখা নদী। বর্ষা মৌসুমে অতিমাত্রায় চলে তাণ্ডব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়ের কবলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আগুনমুখার তীরের এলাকা। নদীভাঙনে পানপট্টি ও কোড়ালিয়ার লঞ্চঘাট বারবার স্থানান্তর করতে হয়। ভাঙনে লঞ্চঘাট–সংলগ্ন সড়ক, মসজিদ, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়।

পানপট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা প্রথম আলোকে জানান, গত পাঁচ বছরে আগুনমুখার ভাঙনে পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকা পাঁচ থেকে ছয় শ ফুট নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছ‌রে বাঁধের বাইরে থাকা তিন শ থে‌কে সা‌ড়ে তিন শ বসতভিটা এবং বাঁধের ওপ‌রে থাকা দেড় শতা‌ধিক দোকান বি‌লীন হ‌য়ে‌ছে।

রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. কামাল পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট এলাকার ১ হাজার ৯৬৮ ফুট বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া এই সময়ে নদীতে চলে গেছে মসজিদ, বসতভিটাসহ দুই শ প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালে লঞ্চঘাটের ভাঙন ঠেকাতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্যালাসাইডিং করা হলেও ভাঙনের তীব্রতায় তা লণ্ডভণ্ড হয়। তাই প্রতিবছর লঞ্চঘাট ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানান্তর করতে হচ্ছে।’ 

পটুয়াখালী নৌবন্দরের উপপরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে পানপট্টি লঞ্চঘাটের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটি মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাঙনকবলিত পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকা ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছি। ওই এলাকার ভাঙনরোধের কাজের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ওই স্থানে বালুর বস্তা ও সিসি ব্লক ফেলা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মার্চ মাসে কাজ শুরু করা হবে।’