সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ভাঙার কাজ আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। স্থাপনাটি কয়েক দিন ধরে ভাঙা চলছিল, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। পরে বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নজরে আসে।
আজ শুক্রবার সকালে সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকায় স্থাপনাটি পরিদর্শন করে ভাঙার কাজ স্থগিতের নির্দেশ দেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক। এ সময় সিলেটের স্থপতি ও পরিবেশকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঐতিহাসিক এ বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ। তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। যার কারণে বাড়িটি সিলেটে ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে পরিচিত। বাড়িটিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ তৎকালীন বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব অবস্থান করেছেন।
ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি কবে নির্মাণ করা হয়েছিল, এর নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, ৮১ শতাংশ জায়গার ওপর স্থাপিত স্থাপনাটির বয়স শত বছরের পেরিয়েছে। বাড়িটিতে সাতটি কক্ষ ও একটি টিনের একচালা বারান্দা রয়েছে। আবদুল হামিদ ১৯৬৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বোন হাফিজা বানু ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের দাদি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন স্থাপনাটি ১৮ লাখ টাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। পরে ওই ব্যবসায়ী শ্রমিক দিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। স্থাপনাটি ভাঙতে শ্রমিকদের দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
আবদুল হামিদের নাতি আনিসুল ইসলাম জানান, বাড়িটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। ছাদ দিয়ে পানি পড়ত। ওই বাড়ির পেছনে আরও বাড়িঘর রয়েছে। তাই পুরোনো বাড়িটি ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। স্থাপনাটি ভাঙতে তাঁদেরও কষ্ট হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিরুপায় হয়ে ভাঙতে হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, বাড়িটি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। পরিবারের সদস্যরা স্থাপনাটি না ভেঙে জাদুঘর করার উদ্যোগ নিতে পারতেন।