
আল আমিনের বয়স যখন চার বছর। ওই সময় তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। তাঁর বাবা আজিজুল মিয়া একজন ভ্যানচালক। চার ভাইবোন, দাদা-দাদিসহ পরিবারে আট সদস্য। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটি গ্রামের স্কুল-কলেজে অনেকটা টাকা ছাড়াই পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কোনো প্রাইভেট ও কোচিং ছাড়াই এবার তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আল আমিনের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামে। তিনি ২০২০ সালে কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৭২ এবং বাড়ির পাশের সরকারি মুজিব কলেজ থেকে ২০২২ সালে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বুয়েটে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
টাকার অভাবে ছেলেকে প্রাইভেট বা কোনো কোচিং সেন্টারে পড়াতে পারেননি বলে জানিয়েছেন আজিজুল মিয়া। তিনি বলেন, তাঁর সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। ঢাকায় এখন সন্তানকে রেখে পড়াশোনা করাতে গেলে অনেক টাকার দরকার। সেই টাকার জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
১৯ জুন বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সেখানে মেধাতালিকায় আল আমিনের মেধাস্থান ১০২০তম। এ ছাড়া ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন। আল আমিন বলেন, তাঁদের আটজনের সংসার। শুধু ভ্যান চালিয়ে তাঁর বাবা সংসার চালান। টাকার অভাবে তিনি উচ্চমাধ্যমিকে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। ভর্তি পরীক্ষা দিতে কোনো প্রাইভেট ও কোচিংও করেননি। এবার বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়ে টাকার অভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার তাঁকে ডেকে নিয়ে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। এর আগে বেলা ২টার দিকে সখীপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার আল আমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১৬ হাত দৈর্ঘ্যের একটি টিনের ঘরের এক পাশে আল আমিনের থাকা ও পড়াশোনার স্থান, অন্য পাশে তাঁর দাদা-দাদি থাকেন। পাশেই আরেকটি কুঁড়েঘরে তাঁর বাবা, সৎমা ও ভাইবোনেরা থাকেন। বাড়ির ভিটা ছাড়া তাঁদের কোনো জমিজমা নেই।
কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুলা মিয়া বলেন, ‘আল আমিন আমাদের বিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার এ সাফল্যে আমরা গর্বিত। স্কুলে পড়ার সময় আমরা তাকে অনেক সহযোগিতা করেছি। এখন বুয়েটে চান্স পেয়েছে। আমরা সবাই যদি তাকে সহযোগিতা করি, তবে তার ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হবে।’
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলম বলেন, ‘আল আমিন নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তান। সখীপুর উপজেলা প্রশাসন সব সময় তার পাশে থেকে সহায়তা করবে। ইতিমধ্যে আল আমিনের হাতে কিছু টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।’