
স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভাঙাসহ তিন দফা দাবিতে বরিশাল ব্লকেড কর্মসূচির আওতায় মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের দুই স্থানে এবং নগরের সদর রোডে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মহাসড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা থেকে বরিশালসহ বিভাগের সব জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে তীব্র গরমে হাজারো যাত্রী অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। বিকল্প পথে কিছু যানবাহন ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করলেও সেসব যানবাহনকে ১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। অপরদিকে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সদর রোড অবরোধ করায় শহরের বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
পটুয়াখালী থেকে আসা যাত্রী আলী আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তীব্র গরমের মধ্যে এ রকম রাস্তা আটকে আন্দোলন করার কী যুক্তি থাকতে পারে? এই আন্দোলন যদি জনগণের পক্ষে হয়, তাহলে কেন জনভোগান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে?’
বরিশাল বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন সিকদার বলেন, তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজও মহাসড়কসহ সদর রোড অবরোধ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ আমরণ অনশন করছে। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম এবং স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক সংস্কারসহ তিন দফা দাবিতে ১৭ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে গত শুক্রবার শুরু হয় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ। শুক্রবার প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। এরপর শনিবার সাড়ে চার ঘণ্টা, রোববার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা এবং সোমবার সাড়ে চার ঘণ্টা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারীরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বরিশালে এসে সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। গতকাল সোমবার বিকেলে সাড়ে চার ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে সেই সময়সীমা পার হলে বরিশাল ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন; স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয় শুনে তদন্ত সাপেক্ষে আবার সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, ‘সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, রোগীদের হয়রানি আর দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভাঙার দাবিতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এখনো বরিশাল আসেননি, শের-ই-বাংলা দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস দেননি। বরিশালবাসীর আর্তনাদ এখনো মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়নি। যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, আন্দোলন আরও কঠোর হবে। সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, রোগীদের হয়রানি ও স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভাঙার তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না।’