রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় উচ্ছেদের পর বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেওয়া কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচ পরিবারের খোঁজ নেন ইউএনও। আজ বুধবার সকালে বাবুডাইং গ্রামে
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় উচ্ছেদের পর বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেওয়া কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচ পরিবারের খোঁজ নেন ইউএনও। আজ বুধবার সকালে বাবুডাইং গ্রামে

কোল জনগোষ্ঠীর ৫ পরিবারকে উচ্ছেদ

‘আশ্রয় লিয়্যাছি বাঁশঝাড়ের তলে, মশার কামড়ে ঘুম আসে না’

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে উচ্ছেদের পর নিরুপায় হয়ে বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নিয়েছে কোল জনগোষ্ঠীর কয়েকটি পরিবার। আজ বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে তাঁদের খোঁজখবর নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা ও সহায়তার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন তিনি।

গত সোমবার বিকেলে উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। আদালতের প্রতিনিধি ও থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। পরিবারগুলোর সদস্যসংখ্যা ১৫ থেকে ২০। উচ্ছেদের পর তারা একটি বাঁশঝাড়ের নিচে রাত যাপন করে।

আজ সকাল সোয়া আটটায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ইউএনও। তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি জমিজমা–সংক্রান্ত কাগজপত্রও দেখেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও ছিলেন মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল ইসলাম, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসিরুল ইসলাম, বাবুডাইং আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে রুমালী হাঁসদা ইউএনওকে বলেন, ‘উচ্ছেদের আগে হামরা দুই ঘণ্টা সময় চাহিয়্যাছিনু বাড়িঘর থাইক্যা জিনিসপত্র বাহির করার লাইগ্যা। কিন্তু হামরাকে কুনু সময় না দিয়্যা ঘরবাড়ি ভাঙচুর করল। হামারঘে হাঁড়িপাতিল, দরজা-জানালা, খাট সব মাটির দেয়ালের লিচে পইড়্যা নষ্ট হয়্যা গেছে। রাঁধা ভাত-তরকারিও হামরা সরাইতে পারিনি। সারা দিন না খায়্যা ছিনু। এ ছাড়া গরু বিক্রি করা টাকাও ছিল ঘরে। সেটাও বাহির করতে পারিনি। আইজ পর্যন্তও খুঁইজ্যা পাইনি। আশ্রয় লিয়্যাছি বাঁশঝাড়ের তলে। মশার কামড়ে ঘুম আসে না।’

রুমালী হাঁসদার দাবি, ‘হামরা খাসজাগা মনে কর্যা এখান বাস করছিনু। ২৫ থেকে ৩০ বছর থাইক্যা বাস করছি। পরে শুন্যাছি, এ জমিগালা হামারঘে জাত-ভাইদের ছিল। এ গাঁয়ের চরণ সাইচুরির (মাঝি) বাবা-জ্যাঠাদের (তিলক মাঝি, দিনু মাঝি, ভাদু মাঝি) নামে এ জমিটা রেকর্ড আছে। ওরাকে হিন্দু সাজিয়্যা জমি রেজিস্ট্রি লিয়্যাছে মকবুল হোসেন নামের এক লোক। মকবুল হোসেনের ওয়ারিশরা হামারঘে বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী সহকারী জজ আদালতে মামলা কর্যাছে। হামরা গরিব মানুষ। ঠিকমতন মামলার তদবির করতে পারিনি।’

‘আপাতত তাঁদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে’

বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর খোঁজ নিয়েছেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতারাও। এ সময় তাঁরা জানান, কোল জাতিগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে হিন্দু সাজিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে এই জমির মালিকানা দাবি করেছে প্রতিপক্ষ। বাড়ি ভেঙে যে ক্ষতি করা হয়েছে, তা ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পরিবারগুলোর পুনর্বাসন করতে হবে। আপাতত তাঁদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নোটিশ প্রাপ্তি নিশ্চিত না করে বাড়ি ভাঙার সঙ্গে যারা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিচিত্রা তিরকি, সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, দপ্তর সম্পাদক নকুল পাহান, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টুনু পাহান, নওগাঁ জেলার সাধারণ সম্পাদক অজিত মুন্ডা, নওগাঁর পোরশা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইচন পাহান, বাসদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য জয়নাল আবেদীন (মুকুল), পোরশা উপজেলা শাখার সদস্য ভোদলু লাকড়া, নিয়ামতপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ফরজমনি প্রমুখ।