Thank you for trying Sticky AMP!!

ভয়ে ভয়ে মাদ্রাসায় যাতায়াত করা ছাত্রীকে শেষমেশ অপহরণই হতে হলো

অপহরণ

ভয়ে ভয়ে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করত আলিম প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী (১৭)। ভয়ের কারণ ছাত্রলীগের এক স্থানীয় কর্মী। প্রকাশ্যে তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছিল ওই ছাত্রী। প্রতিকারের আশায় ছাত্রলীগ কর্মীর পরিবারকে অভিযোগও দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা–বাবা, কাজ হয়নি তাতে। বিচার দিয়েছিলেন সমাজপতিদের কাছেও। সালিসবৈঠক হলেও ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা বন্ধ হয়নি। নিরাপত্তার জন্য ওই ছাত্রীর ভাই-বোনও তার সঙ্গে মাদ্রাসায় যেত। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে ভাই ও বোনকে মারধর করে প্রকাশ্যেই ওই ছাত্রীকে অপহরণ করেন ছাত্রলীগের ওই কর্মী।

ফেনীর সোনাগাজীতে ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে গত সোমবার বিকেলে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে ছাত্রলীগের কর্মী মো. ইয়াসিন(২৫) ও তাঁর সহযোগী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আবদুল খালেককে (২৮) আসামি করে মামলা করেছেন ছাত্রীর বাবা। মামলার পর গতকাল দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকা থেকে অটোরিকশাচালক আবদুল খালেককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অপহরণের শিকার ওই ছাত্রী উপজেলার স্থানীয় একটি মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন উপজেলার নাজিরপুর এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী মো. ইয়াসিন। সোমবার সকালে পরীক্ষা দিতে ওই ছাত্রী তার ভাই ও চাচাতো বোনের সঙ্গে মাদ্রাসায় যায়। পরীক্ষা শেষে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াসিনসহ কয়েকজন তাদের গাড়ির গতি রোধ করেন। এ সময় তাঁরা ওই ছাত্রীর ভাই ও চাচাতো বোনকে মারধর করে জোর করে অটোরিকশা থেকে তাকে নামিয়ে নিয়ে যান।

অপহরণের শিকার মাদ্রাসাছাত্রীর চাচা প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসায় যাতায়াতের পথে ইয়াসিন তাঁর ভাতিজিকে উত্ত্যক্ত করতেন। এ কথা সে পরিবারকে জানিয়েছিল। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিল মেয়েটি।

ঘটনার পর থেকে মেয়েকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ইয়াসিনের বাড়িতে যান ছাত্রীর বাবা। সেখানে ইয়াসিনের পরিবারের সদস্যরা দুর্ব্যবহার করে তাঁকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর মেয়ের কোনো সন্ধান না পেয়ে থানায় মামলা করেন তিনি।

অপহরণের শিকার ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াসিনের ভয়ে তাঁর মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় যেতে পারেনি। এখন পরীক্ষা শুরু হওয়ায় বাধ্য হয়ে মেয়েটি ভাইয়ের সঙ্গে মাদ্রাসায় গিয়েছিল। সে বারবার এমন আশঙ্কার কথা বলেছিল। ভয় পেত মাদ্রাসায় যেতে। ইয়াসিনসহ অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

এ ঘটনায় ছাত্রীর পরিবার একাধিকবার সালিস করেছে। সালিসে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সমাজপতি রুহুল আমিন। তিনি বলেন, মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতে ইয়াসিনকে বারবার নিষেধ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে সালিসবৈঠকেও তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনের সামনে মেয়েটিকে আর উত্ত্যক্ত করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। এরপরও ভাই-বোনকে মারধর করে ইয়াসিন মেয়েটিকে অপহরণ করেছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমাম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মূল অপহরণকারীর সহযোগী অটোরিকশাচালককে গ্রেপ্তার করে গতকাল বিকেলে আদালতের মাধ্যমে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার ও অপহরণকারীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।