
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে নির্বাচনের প্রচার শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। আজ রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। তাই শেষ মুহূর্তে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আশার পাশাপাশি আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন।
আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে অভিযোগ তুলেছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর আস্থা রাখার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা কতটা বজায় থাকবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন উভয় দুই প্যানেলের ভিপি প্রার্থীরা।
প্রচারণার ক্ষেত্রে তাঁরা বাধার শিকার হয়েছেন জানিয়ে সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘গতকাল সোমবার বেগম খালেদা জিয়া হলে আমাদের একটি প্রজেকশন মিটিং ছিল; কিন্তু আমাদের খাবার, চেয়ার এমনকি প্রজেক্টরও হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। প্রশাসন এগুলো জব্দ করেছে বলে জানিয়েছে, যা হাস্যকর। নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হলেও কয়েকজন কমিশনার এবং হল প্রাধ্যক্ষের আচরণে পক্ষপাতিত্বের ছাপ দেখা গেছে।’
শিবির–সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী নূর উদ্দীন আবীর। তিনি বলেন, তারা (সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা) বিভিন্ন হলে খাবার ও উপঢৌকন বিতরণ করছে, যা হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এটি একটি প্রমাণিত অভিযোগ।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর আস্থার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত এটি কতটা বজায় থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী। তিনি বলেন, এখন তাঁরা সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবেন কি না, তা নিজেদের বিবেকের ওপর নির্ভর করছে।
একই বিষয়ে শিবির–সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনই চূড়ান্ত মন্তব্য করতে চাই না। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং তার পরবর্তী কয়েক দিনের পরিবেশ দেখেই বোঝা যাবে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয়েছে।’
শেষ সময়ের প্রচারণায় বিভিন্ন প্যানেলের সক্রিয় সমর্থকেরাও অংশ নিয়েছেন। প্রচারণার শেষ দিন রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রার্থীদের সমর্থকেরা দল বেঁধে মাঠে নেমেছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তাঁরা অবস্থান নিয়ে প্রার্থীদের প্রচারপত্র বিলি করছেন।
সকাল পৌনে ৯টা থেকে প্রচার শুরু করেছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে চিঠি দিয়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, প্রচারণার শেষ দিন আজ সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। অনেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে—এমনটাই প্রত্যাশা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের পশ্চিম পাশের ফটকে বেলা ১১টায় পাঁচজন সমর্থককে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেল। তাঁরা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, আধিপত্যবিরোধী ঐক্যসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। সেখানে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের হয়ে পান্ডা ও প্রজাপতি আকারের প্রচারপত্র বিতরণ করছিলেন।
রাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র কার্যনির্বাহী পদে প্রার্থী হিসেবে ইয়াসিন আরাফাত আরমান নামে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর পক্ষে লিফলেট বিতরণ করছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাবুর ইসলাম। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ভোটের আমেজ তৈরি হয়েছে। প্রার্থীদের পাশাপাশি তাঁরা সমর্থকেরাও জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।
‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী আল শাহরিয়া শুভর পক্ষে ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে লিফলেট বিতরণ করছিলেন একদল শিক্ষার্থী। বেলা সোয়া ১১টার দিকে টুকিটাকি চত্বরের সামনে সমর্থক জিসান হোসেন জানান, সবাই যার যার অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল রাতে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রজেকশন মিটিংয়ে (পরিচিতি) বিতরণের উদ্দেশ্যে আনা পাঁচ বস্তা নাশতা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন আচরণবিধির ৪ নম্বর ধারা স্পষ্ট করেছেন। আজ দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ ধারা স্পষ্ট করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হলের অভ্যন্তরে নির্বাচনী সভার বাইরে থেকে কোনো চেয়ার/আসবাব ও মাইক/সাউন্ডবক্স আনা যাবে না। হলের নিজস্ব আসবাব ও সাউন্ডসিস্টেম (যদি থাকে) ব্যবহার করেই নির্বাচনী সভা সম্পন্ন করতে হবে। উক্ত সভায় কোনো প্রকার নাশতা/খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা যাবে না।’
উল্লেখ্য, গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল খালেদা জিয়া ও মন্নুজান হলে সভার আয়োজন করে। তাঁরা খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বাইরে থেকে চেয়ার ভাড়া করে। তবে হল প্রশাসন তাঁদের হলের ভেতরের চেয়ার-টেবিল দিয়েই কার্যক্রম চালাতে বলে। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার (স্যান্ডউইচ, চকলেট, সস) আনে প্যানেলটি। এ সময় হল ফটকে উপস্থিত হয়ে তাঁদের খাবার প্রবেশে বাধা দেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দসহ অন্যরা।
এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানান প্যানেলটির প্রার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতারা। এর আগে হলের সভায় খাবার বিতরণ করা আচরণবিধি লঙ্ঘন দাবি করে নির্বাচন কমিশনে গত মঙ্গলবার ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল।
রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ প্রযোজ্য নয়।
আজ দুপুরে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ, চলাচল বা অবস্থান করতে পারবে না। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে; তাঁরা ক্যাম্পাসের সব রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন।
গণমাধ্যমকর্মীরা রাকসু নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পাস দেখিয়ে নিজেদের বহনকারী যানবাহন নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থান করতে পারবেন; বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোর দিকে ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা এবং অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। তবে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহৃত গাড়ি এই নির্দেশনার বাইরে থাকবে।