
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে গোপনে হলের মেয়েদের অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলে একই বিভাগের প্রাক্তন এক ছাত্রকে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক পাস করা এক ছাত্রী গোপনে তাঁর সহপাঠী ও হলের মেয়েদের ঘুমন্ত ও অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলতেন। ছবিগুলো তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র শরীফ ইশতিয়াক ওরফে আকাশকে পাঠাতেন। শরীফ ইশতিয়াক বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ ইশতিয়াক বলেন, ‘আমি মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছি এবং বিভিন্ন সময়ে মেয়েদের ছবিও নিয়েছি। তবে ছবি নেওয়ার পেছনে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। ছবিগুলো আমি ফোনে সংরক্ষণও করে রাখিনি। আমি সব কথোপকথনও ডিলিট করে দিয়েছি। আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে যা শাস্তি দেবে, আমি তা মানতে প্রস্তুত।’
ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তাঁরা আজ বুধবার প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দুজনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ইন্টার্নশিপ চলাকালে ওই ছাত্রীর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ করেন সহপাঠীরা। পরে তাঁরা নিশ্চিত হন, ওই ছাত্রী দীর্ঘদিন ধরে সহপাঠী ছাত্রীদের অজ্ঞাতে অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলতেন এবং সেগুলো শরীফ ইশতিয়াকের কাছে পাঠাতেন। এর মধ্যে ওই ছাত্রী গত সোমবার অনুষদের ডিন ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে স্বীকার করেন, তাঁর কাছে মেয়েদের এমন ছবি চেয়ে বারবার অনুরোধ করতেন শরীফ ইশতিয়াক। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের পর কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ অভিযুক্ত ছাত্রীর মুঠোফোন জব্দ করেন। গতকাল মঙ্গলবার অনুষদের ডিন নিজেই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত ছাত্রীকে আজ বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগটি আমরা আজ বিকেলেই হাতে পেয়েছি। যৌন হয়রানির বিষয় দেখার জন্য একটি কমিটি আছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য আমরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করব এবং আইন অনুযায়ী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
ঘটনার বিষয়ে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও নিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বেনতুল মাওয়া বলেন, ভুক্তভোগীদের কমিটির কাছে ঘটনার বিবরণসহ লিখিত অভিযোগ জমা দিতে হবে। ভুক্তভোগী ছাড়াও ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জানেন, এমন যে কেউ সরাসরি কমিটির কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। যদি প্রক্টর অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ জানানো হয়, তাহলে সেখান থেকে চিঠিটি কমিটির কাছে ফরওয়ার্ড করতে পারে। তিনি বলেন, চিঠি হাতে পেলে তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।