গীতা কড়াকে বই ও শিক্ষা উপকরণ উপহার দেয় উপজেলা প্রশাসন। আজ বুধবার সকালে বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে
গীতা কড়াকে বই ও শিক্ষা উপকরণ উপহার দেয় উপজেলা প্রশাসন। আজ বুধবার সকালে বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে

মাধ্যমিক পেরোনো কড়া সম্প্রদায়ের প্রথম নারী গীতা, উচ্চমাধ্যমিকে পাশে দাঁড়াল প্রশাসন

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কড়া সম্প্রদায়ের মেয়েদের মধ্যে প্রথমবারের মতো এবার মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছে গীতা কড়া নামে এক শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে দিনাজপুর সংগীত ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অবশেষে গীতার পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

আজ বুধবার সকালে বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপহার হিসেবে প্রথম বর্ষের প্রয়োজনীয় বইপুস্তকসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ গীতার হাতে তুলে দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিরল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইশতিয়াক আহমেদ, গীতা কড়ার বাবা কৃষ্ণ কড়া, মা বাবলী কড়া প্রমুখ।

গীতা কড়া ২০২৪ সালে উপজেলার হালজায় উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৩ দশমিক ৩৯ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আজ উপহারসামগ্রী হাতে পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে। গীতা জানায়, ‘বাবা বই কিনে দিতে পারছিলেন না। কয়েক দিন আগেও মনে হচ্ছিল, পড়ালেখা বোধ হয় আর হবে না। তবে আজ খুব ভালো লাগছে। পড়ালেখার খরচ নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।’

মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন গীতার মা-বাবা। মা বাবলী কড়া জানান, তিনি নিজে বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেননি। সংসারে কাজের পাশাপাশি খেতেও কাজ করেছেন। এখন মেয়ে বড় হয়েছে, পড়ালেখা শিখছে। খুব ভালো লাগছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, ইতিমধ্যে কলেজটির অধ্যক্ষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। গীতাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাকে এগিয়ে নিতে পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ঝিনাইকুড়ি গ্রামে বসবাস করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কড়া সম্প্রদায়ের লোকজন। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় রেললাইন স্থাপনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছিলেন সম্প্রদায়টির লোকজন। তাঁরা মূলত ভারতের ঝাড়খন্ড এলাকা থেকে আসেন। কাজ শেষে অনেকে ফেরত গেলেও দেশে থেকে যান কয়েকজন। বর্তমানে ২৮টি পরিবারে মোট ৯৫ জনের বসবাস। শিক্ষাদীক্ষায় ছিলেন পিছিয়ে।

এর আগে কড়া সম্প্রদায়ের ছেলেদের মধ্যে মাত্র তিনজন মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে লাপোল কড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। বিজন কড়া ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে আর জয়ন্ত কড়া উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে। মেয়েদের মধ্যে গীতা কড়াই প্রথমবার মাধ্যমিক শেষ সম্পন্ন করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে।