‘একতরফা’ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারা দেশে আজ রোববার বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল চলছে। হরতালের প্রথম দিন চট্টগ্রাম নগরে যানবাহন চলতে দেখা গেলেও প্রাইভেট কার ও গণপরিবহন কম ছিল। দূরপাল্লার বাস চলাচল করেনি।
আজ সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নগরের মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জামালখান, অলংকার, এ কে খান, কর্নেলহাট, সাগরিকা মোড়, টাইগারপাস, ওয়াসা মোড়, জিইসি ও প্রবর্তক ঘুরে দেখা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহন চলছে। তবে বাসের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা দেখা গেছে অন্য দিনের মতোই। জিইসি, জামালখান, ২ নম্বর গেট এলাকায় স্কুল-কলেজ ও অফিসমুখী লোকজনকে যানবাহন পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। নগরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থানও দেখা গেছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মোহাম্মদ মুছা প্রথম আলোকে বলেন, হরতালে আনোয়ারা, পটিয়া, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় ভেঙে ভেঙে বাস চলাচল করছে। তবে দূরপাল্লার যাত্রী না থাকায় ক্লোজডোর বাস চলেনি। রাস্তায় কোনো ধরনের সমস্যাও হয়নি।
এদিকে হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে নগরের বিভিন্ন থানায় মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সকালে অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কে ইট ফেলে পিকেটিং করেছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
নগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে চট্টগ্রামেও শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। জেলা-উপজেলার বিভিন্ন সড়কে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করেছেন নেতা-কর্মীরা। মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালের সমর্থন করেছেন।
তবে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির অযৌক্তিক হরতাল মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষ কাজে যাচ্ছে। রাস্তায় নামছে। সবকিছু স্বাভাবিক আছে। হরতাল-অবরোধ বাদ দিয়ে নির্বাচনে আসা উচিত বিএনপির।
অন্যদিকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির জ্বালাওপোড়াও রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। জনজীবন স্বাভাবিক আছে। হরতাল কর্মসূচি ব্যর্থ।
তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ডাকা দুই দিনের হরতাল শুরুর আগের দিন গতকাল শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ কারণে স্কুলশিক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষক ও যানবাহনের চালকদের মধ্যে একধরনের ভয় কাজ করছে।
আজ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা ও বার্ষিক মূল্যায়ন চলছে। স্কুলের সামনে অভিভাবকদের ভিড় রয়েছে। কলেজিয়েট স্কুলের সামনে কথা হয় মো. ফেরদৌসের সঙ্গে। তাঁর ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ফেরদৌস বলেন, হরতাল-অবরোধের আগে যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই ভয়টা বেড়েছে।
কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। পাশাপাশি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছে। উপস্থিতি শতভাগ। কোনো শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকের আসতে অসুবিধা হয়নি।
এদিকে গতকাল রাতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, এ ঘটনায় বাসমালিক গতকাল রাতেই মামলা করেছেন। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।