স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানে বক্তারা

হেলাল হাফিজের সৃষ্টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুপ্রেরণা জোগাবে

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় কবি হেলাল হাফিজের স্মরণে অনুষ্ঠান। বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাব এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ছবি: প্রথম আলো

হেলাল হাফিজ শুধু একজন কবি নন, তিনি ছিলেন এক যুগান্তকারী প্রতীক। তাঁর কবিতায় প্রেম, দ্রোহ এবং জীবনের গভীর অনুভূতিকে তুলে ধরার কারণেই সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে। লাখ লাখ বাঙালি তরুণ-তরুণী তাঁর কবিতা মুখস্থ করেন; তিনি হৃদয়ের ক্ষত ধরে লিখেছেন। তাই তিনি যুবসমাজের মধ্যে এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তাঁর সৃষ্টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

আজ বুধবার কবি হেলাল হাফিজ স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানে তাঁর নিজ জেলা নেত্রকোনায় বক্তারা এ কথা বলেন। দুপুর একটার দিকে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বটবৃক্ষ চত্বরে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাব এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান ভূঁইয়া। পরিচালনা করেন সদস্যসচিব কবি ভূঁইয়া বুলবুল। বক্তব্য দেন কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবি ও প্রাবন্ধিক ইমদাদুল হক তালুকদার, সহকারী পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোস্তফা, ওসি মিজানুর রহমান, হেলাল হাফিজের ছোট ভাই কবি নেহাল হাফিজ, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরী, কবি ও অনুবাদক এনামুল হক, কবি সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. লাইমুন হোসেন ভূঁইয়া, চর্চা সাহিত্য আড্ডার সমন্বয়ক কবি রহমান জীবন, প্রথম আলোর নেত্রকোনা প্রতিনিধি পল্লব চক্রবর্তী প্রমুখ। হেলাল হাফিজের কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মাহবুবা খানম।

তানভীর জাহান চৌধুরী বলেন, হেলাল হাফিজের ৫৬টি কবিতায় গড়া একটিমাত্র কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ বইটি ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পঠিত কাব্যগ্রন্থ। বইটি তিনি হৃদয়ে ক্ষত ধরে লিখেছিলেন। বইটির অধিকাংশ পঙ্‌ক্তি লাখ লাখ বাঙালি তরুণ–তরুণীর মুখস্থ। কবি এনামুল হক বলেন, বাংলায় এমন কোনো সাহিত্যপ্রেমী নেই, যিনি ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ গ্রন্থের অন্তত একটি ছত্র আওড়াননি জীবনে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রেমাঙ্গন, আটপৌরে উঠোন থেকে প্রেয়সীর দীর্ঘশ্বাস, সাম্রাজ্যবাদ থেকে সাম্যবাদ, কী নেই এ কবিতাগুলোর ছত্রে ছত্রে।

ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘হেলাল হাফিজের কবিতা শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলাভাষী সব মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রোথিত। তাঁর অনেক অনবদ্য সৃষ্টি আছে; যা আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। কবির স্মৃতিকে অম্লান রাখতে তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।’

হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্য কেটেছে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ায়। কিন্তু ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেই থেকে তিনি রাজধানীবাসী হন, আর ফেরেননি নিজ এলাকায়। আলোচকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি মাত্র তিনবার নিজ জেলায় এসেছিলেন। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনায় বসন্ত উৎসবে খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করতে এসেছিলেন।

নেত্রকোনারই এক নারীর সঙ্গে কৈশোরকাল থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল হেলাল হাফিজের। কিন্তু সবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, ঠিক তখন ওই নারীকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন তাঁর মা-বাবা। এ কারণে আজীবন এক বিরহ-যন্ত্রণাকে লালন করে বেঁচে ছিলেন কবি। আর তা দিয়ে বুনন করে গেছেন অনন্য সব কবিতা। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ তাঁর কাছে ছিল নিতান্ত তুচ্ছ। এসব কারণে জন্মভূমি নেত্রকোনার প্রতিও ছিল তাঁর একধরনের প্রচ্ছন্ন অভিমান।