সিনেমার গল্পের মতোই জীবন চার ভাই-বোনের

খাগড়াছড়ি সরকারি শিশু পরিবার
ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

চার ভাই-বোনের গল্প অনেকটা সিনেমার কাহিনির মতো। আর দশটি পরিবারের মতো তারাও ছিল বাবা-মায়ের মমতা ও আশ্রয়ে। আজ কেউই নেই। প্রবাসে জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা। দেশেও আপন বলতে কাউকে চেনে না তারা। তাদের বর্তমান ঠিকানা খাগড়াছড়ি শিশু পরিবার।

এই চার ভাই-বোনের বাবা ২১ বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে কাজের সূত্রে ইন্দোনেশিয়ার এক নারীর সঙ্গে পরিচয় এবং বিয়ে। এরপর তাঁদের পরিবারে একে একে চার সন্তান আসে ঘর আলো করে। তবে হঠাৎ করে ছয় বছর আগে সন্তানদের রেখে নিজ দেশে চলে যান মা। আর ফেরেননি। বাবার কাছেই বড় হচ্ছিল তারা। এরপর আরও এক ঝড় এসে শেষ আশ্রয়টুকুও যেন কেড়ে নিল তাদের। ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান বাবা।

বাবার মৃত্যুর পর চার শিশু এতিম ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়লে ঠাঁই হয় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেইফ হোমে। সেখানে ৮ মাস থাকার পর ৩১ ডিসেম্বরে বাংলাদেশে আসে তারা প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডের সহায়তায়। এরপর ঢাকার তেজগাঁওয়ের শিশু পরিবারের আশ্রয়ে পাঠানো হয় তাদের। সেখান থেকে মঙ্গলবার সকালে তাদের নিয়ে আসা হয় খাগড়াছড়ি শিশু পরিবারে। এই চার শিশু-কিশোর ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই থাকবে।

শিশুদের বাবার বাড়ি কক্সবাজারে। চার ভাই-বোন এর আগে কখনো এ দেশে না এলেও বাবার মাতৃভাষা, অর্থাৎ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। আজ বুধবার দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের মধুপুর এলাকায় সরকারি শিশু পরিবারে গেলে কথা হয় তাদের সঙ্গে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নিজেদের নতুন ঠিকানায় আসার অনুভূতি জানায় তারা।

শিশু পরিবারে গিয়ে দেখা যায়, একটি খাটে ঘুমাচ্ছে একজন। পাশের আরেকটি খাটে তিন ভাই-বোন গল্প করছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। সবার বড় বোনের কাছে এখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতি খুব ভালো লেগেছে। সে বলে, ভাইবোন ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ নেই তার। তাই তারা ভাইবোন মিলে একসঙ্গে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল দেশে আসার পর। ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে থাকতে পারবে, এতে তারা খুশি। তবে ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর কোথায় যাবে, কীভাবে বাঁচবে—এই ভয় তাকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বাবা তাদের নিয়ে কয়েকবার বাংলাদেশের কক্সবাজারের গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু তার ভাইবোনেরা ছোট হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বাবা এবং মা দুই দিকের কোনো আত্মীয়স্বজনকে তারা চেনে না। যোগাযোগও নেই।

শিশু পরিবারের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক শিউলি বড়ুয়া বলেন, চার শিশু আসার পর থেকে তাদের বাড়তি যত্ন নেওয়া হচ্ছে। অনেকটা পথ গাড়িতে আসার কারণে ছোট মেয়েটা একটু দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুই-এক দিন পর ছেলেটিকে পাশের ছাত্রনিবাসে পাঠানো হবে। তবে সে প্রতিদিন তার বোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে। আগামী সপ্তাহে তাদের স্কুলেও ভর্তি করা হবে। পাশাপাশি পছন্দ অনুসারে খেলাধুলা, গান, নাচ, আবৃত্তি ও কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি হবে তারা।