এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৩ পেয়েছে স্বর্ণালী আক্তার (দৃষ্টি)। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার ২২ হাজার ৩২৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও ব্যতিক্রমী ফলাফলের জন্য এখন আলোচনায় বগুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এই অদম্য মেধাবী। বগুড়ার বিএফ শাহীন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে পরীক্ষা দিয়েছিল।
স্বর্ণালী আক্তার জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীকোলা-চক গোপালপাড়া গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। পরিবার সচ্ছল না হওয়ায় শহরে থাকার মতো সামর্থ্য ছিল না। শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রতিদিন ভ্যানে ও বাসে করে সে কলেজে যাতায়াত করত। ভবিষ্যতে পড়ালেখা করে সে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের পর প্রত্যাশিত ফলাফল পেয়েছে স্বর্ণালী। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষক, সহপাঠী, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। স্বর্ণালী বলে, ‘পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছিল। ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৭০ থেকে ১২৮০ নম্বর পাব প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু পেয়েছি ১২৮৩। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পাওয়ায় ভালো লাগছে।’
প্রতিদিন গড়ে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে জানিয়ে স্বর্ণালী আক্তার বলে, ভালো ফলাফলের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অবদান মা-বাবার। সংসার খুব সচ্ছল না হলেও তাঁরা শহরের নামকরা প্রতিষ্ঠানে তাকে ভর্তি করিয়েছেন। পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। ভালো ফলাফল অর্জনে শিক্ষকেরা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলেজে যেতে হয়েছে তার।
স্বর্ণালী আক্তার বলে, ‘শহরে রেখে পড়ালেখা করানোর মতো পরিবারের সামর্থ্য ছিল না। বাবার সবজি ব্যবসার আয়ে সংসার চলে। কষ্ট হলেও প্রতিদিন বাড়ি থেকে প্রথমে ভ্যানে মোকামতলা বন্দরে যেতাম। সেখান থেকে বাসে কলেজে যেতাম। কষ্ট হলেও অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের আর্থিক সংকটের মধ্যে শহরের নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করা ব্যয়বহুল ছিল। প্রাইভেট পড়তে হতো। প্রতি মাসে অনেক খরচ। সেই খরচ জোগাতে পরিবারকে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবু বাবা-মা কখনো অর্থকষ্ট বুঝতে দেননি। ভবিষ্যতে মানবিক চিকিৎসক হতে চাই। চিকিৎসা পেশায় গিয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।’
স্বর্ণালীর বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, সবজি ব্যবসার আয়ে সংসার চলে। সংসার খুব বেশি সচ্ছল না হলেও সন্তানদের কখনো অর্থকষ্ট বুঝতে দেননি। বড় ছেলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে পুলিশে যোগ দিয়েছেন। মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে চান। শিক্ষকদের পরামর্শ মেনেই পড়ালেখা করেছে মেয়ে। তিনি শুধু পড়ালেখার খরচ দিয়েছেন।
মা রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘সংসারে অসচ্ছলতা ছিল। কিন্তু মেয়েকে কখনো বুঝতে দিইনি। ভালো ফলাফলের জন্য পড়ালেখার ভালো পরিবেশ খুব জরুরি। সেটা সব সময় নিশ্চিত করেছি। পড়ালেখায় নিজে থেকেই আগ্রহী ছিল। মা-বাবা হিসেবে আমরা সব সময় উৎসাহ দিয়েছি।’
বগুড়ার বিএফ শাহীন কলেজের অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপ্টেন শান্তনু চৌধুরী বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা সব সময় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখান। ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য তাঁরা শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক পরিচর্যার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে বেশি গুরুত্ব দেন। তাঁদের শিক্ষার্থী স্বর্ণালী এবার এসএসসিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সর্বোচ্চ এবং সারা দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে দারুণ চমক দেখিয়েছে। এ জন্য তাঁরা গর্বিত। সে পড়াশোনায় খুব পরিশ্রমী এবং সেই পরিশ্রমের ফলও পেয়েছে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবার শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বগুড়ায় ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে বগুড়া এগিয়ে। এবার বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া ২২ হাজার ৩২৭ জনের মধ্যে বগুড়ার ৫ হাজার ৯০০ জন শিক্ষার্থী।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা বোর্ড থেকে এখন আর মেধাভিত্তিক তালিকা করা হয় না। এ কারণে বোর্ডে সর্বোচ্চ নম্বর কে পেয়েছে সেটা রেকর্ড রাখা হয়নি। তবে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী ১২৮৩ নম্বর পেয়ে থাকলে সেটা অবশ্যই কৃতিত্বের।