Thank you for trying Sticky AMP!!

জমিতে কীটনাশক ছিটানোর ড্রোন উড়িয়ে দেখাচ্ছেন এর উদ্ভাবক সবুজ সরদার। বুধবার বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে নবান্ন উৎসবে

রাজশাহীতে নবান্ন উৎসবে উড়ল ড্রোন

গান গেয়ে ধান কাটার প্রতিযোগিতা, নৃত্য পরিবেশন ও ফুল দিয়ে অতিথিবরণের মধ্যেই উড়ল ড্রোন। এই ড্রোন দিয়ে জমিতে কীটনাশক ছিটানো যায়। ড্রোনটি তৈরি করেছেন দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। এমন নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহীর নিভৃত গ্রাম চৈতন্যপুরের এবারের নবান্ন উৎসব।

চার বছর ধরে এই গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান ব্যক্তি উদ্যোগে এ উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ফসল আবাদ করার কারণে তিনি দুবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকায় প্রায় ১০ ধরনের নতুন ফসল চাষের প্রচলন করেছেন। শিক্ষিত মানুষকে কৃষিতে উৎসাহিত করার জন্য তিনি এ উৎসবের আয়োজন করে থাকেন।

আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ, উপপরিচালক মেজদার হোসেন, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা, চারঘাটের ডাকরা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রউফ, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা, গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ, রাজশাহীর সফল খামারি আরাফাত রুবেল প্রমুখ।

তিনটি গ্রামের কিষানিদের নিয়ে হয় ধান কাটার প্রতিযোগিতা। বুধবার বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে নবান্ন উৎসবে

ফুল দিয়ে চৈতন্যপুর গ্রামের শিশুরা অতিথিদের বরণ করে নেয়। এরপর তিনটি গ্রামের কিষানিদের ধান কাটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ধান কাটা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় স্থানীয় শাহানাপাড়া গ্রামের মুকুলের দল, চৈতন্যপুর গ্রামের মমতার দল ও বেলডাঙ্গা গ্রামের আলপিনা খাখার দল। প্রতিটি দলে পাঁচজন করে কিষানি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এদের মধ্যে মুকুলের দল প্রথম স্থান অধিকার করে। তাঁদের পুরস্কৃত করা হয়।

অতিথিরা বলেন, ‘কার্তিকের মঙ্গার পরে অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকের ঘরে নতুন ধান ওঠার আনন্দ থেকেই আবহমান কাল ধরে এ সময়ে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। তবে এখন কৃষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ার ফলে সারা বছর ধান আসে। তারপরও বাঙালির ঐতিহ্য ধারণ করার জন্য কৃষক মনিরুজ্জামান এ উৎসব ব্যক্তি উদ্যোগে আয়োজন করে যাচ্ছেন। মনিরুজ্জামান একজন আধুনিক কৃষক। তিনি কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। স্নাতক পাস করে কেউ বলেন না যে তিনি কৃষক হতে চান। কিন্তু মনিরুজ্জামান কৃষক হয়েছেন। তাঁর এই দৃষ্টান্ত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক।’

নবান্ন উৎসবে স্থানীয় শিশুরা একের পর এক নৃত্য পরিবেশন করে। বুধবার বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে নবান্ন উৎসবে

উৎসবে কীটনাশক ছিটানো ড্রোনের উদ্ভাবক সবুজ সরদারকে ‘নবান্ন সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া সবুজ তাঁর উদ্ভাবিত ড্রোন উড়িয়ে অতিথিদের দেখান। শত শত কৃষক করতালি দিয়ে তাঁকে উৎসাহিত করেন। সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ড্রোনটি দুই লিটার পানি বহন করতে পারে। এটির উন্নয়ন ঘটিয়ে ১৫ লিটার পানি বহনে সক্ষম করা গেলে এটি দিয়ে মাত্র ৯ মিনিটে একজন কৃষক তাঁর এক বিঘা জমিতে কীটনাশক ছিটাতে পারবেন।

মনিরুজ্জামান অনুষ্ঠানের অতিথিদের হাতে উপহার হিসেবে একটি করে বই তুলে দেন। এরপর স্থানীয় শিশুরা একের পর এক নৃত্য পরিবেশন করে। অনুষ্ঠান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।

জমিতে কীটনাশক ছিটাতে সক্ষম সবুজ সরদারের ড্রোন

মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কৃষকের জীবনে আনন্দ-উৎসব করার সময় খুব কম। কখনো অতিবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কখনো খরায় পুড়ে যায়, কখনো ভালো ফসল হলেও বাজার পায় না। এই দুশ্চিন্তায় কৃষকের মনে আনন্দ থাকে না। নতুন ধান কেটে ঘরে তোলার সময় তিনি এ উৎসবের আয়োজন করেন। তিনি বলেন, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর একজন কৃষকের সন্তান সবুজ সরদার একটি ড্রোন উদ্ভাবন করেছেন। এবারের উৎসবে তিনি কৃষকদের কীটনাশক ছিটানোর এই ড্রোন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।