
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাস কাটার মেশিনের ব্লেড ভেঙে ছিটকে গিয়ে এক দোকান কর্মচারীর মাথার খুলিতে ঢুকে গেছে। তাঁর অবস্থা গুরুতর।
শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তির নাম সাব্বির হোসেন (সুমন)। তাঁর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। তিনি কাঁকড়া ফ্রাইয়ের একটি ভ্রাম্যমাণ দোকানের কর্মচারী।
আহত সাব্বির বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে সাব্বিরের সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর সিদ্দিকি প্রথম আলোকে বলেন, ব্লেডটি সাব্বিরের খুলি ভেদ করে এক ইঞ্চি ভেতরে চলে গেছে। রাত সাড়ে বারোটার দিকে অস্ত্রোপচার করে ব্লেডটি বের করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ক্লাবের আয়োজনে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে রাত্রিকালীন ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছে। শনিবার ছিল টুর্নামেন্টের শেষ দিন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেলে যন্ত্র দিয়ে মাঠের ঘাস কাটছিলেন আবুল হোসেন নামের এক কর্মচারী। ঘাস কাটা অবস্থায় হঠাৎ যন্ত্রের একটি ব্লেড ভেঙে দূরে ছিটকে গিয়ে সাব্বিরের মাথায় ঢুকে যায়। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠান সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা।
আহত সাব্বিরের দোকানের পাশে পিঠার দোকান দিয়েছিলেন সাভারের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নাদিয়া মীম। তিনি বলেন, সাব্বির দোকানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় একটি ব্লেড ছিটকে এসে তাঁর মাথায় ঢুকে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে পড়ে যান।
ঘাস কাটা কর্মচারী আবুল হোসেন বলেন, ‘ঘাস কাটার সময় মেশিনে ইট লেগে এত বড় দুর্ঘটনা হবে এটা ভাবতে পারছি না।’
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
তবে মর্মান্তিক এমন ঘটনা ঘটার পরও রাত বারোটা পর্যন্ত খেলা চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাঁদের কেউ কেউ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কথা বলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক এক ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যে লেখেন, ‘এরপরও আজ খেলা চালিয়ে গেল? মনুষ্যত্বের সাথে বিবেক বোধটাও হারিয়ে ফেলছে।’
জাতীয় ছাত্রশক্তির জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহানা বিনতে জিগার ফারিন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আচ্ছা এমনভাবে যদি বলি যে, আজকে সেন্ট্রাল ফিল্ডে খেলা দেখতে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এইভাবে আহত হইসেন! তখন গিয়ে কি সুশীলেরা রাজনীতি করতে এর বিচার চেয়ে সোচ্চার হবে? তখন তাদের মিছিল বের হবে। পেশা, সামাজিক শ্রেণি বৈষম্যের বাইরে গিয়ে সে তো একজন মানুষ তাই না! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এত রোমহর্ষক একটা ঘটনা ঘটে গেছে, অথচ কেউ কোনো কথা বলছে না। মানবিকতা কি বেঁচে দিলাম আমরা?? এর প্রতিবাদ জানাই, ঘোর প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি, সিলেক্টিভ ঘটনায় বিচার চাওয়াদের প্রতি জানাই ধিক্কার!!’
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ক্লাবের সভাপতি আরশাদ হাবিব বলেন, খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ মোটরসাইকেল যোগে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাই। আমরা অনুমতি নিয়েই খেলা পরিচালনা করেছি।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘খেলার ব্যাপারে উপাচার্য মহোদয়ের অনুমতি রয়েছে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছে।’